উপজেলা নির্বাচনে এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বিজয়ীরা

113

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আট উপজেলা চেয়ারম্যান এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন। গেলবার পরাজিত উপজেলায় প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। সেসব উপজেলায় বেশিরভাগই নতুন প্রার্থী আসতে পারে। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলাপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মিলিত সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, তৃণমূল থেকে যে তালিকা আসবে তা ধরেই আমরা কেন্দ্রে পাঠাবো। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত মতামত প্রাধান্য পাওয়ার সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার পক্ষে। এক্ষেত্রে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তৃণমূল যে সিদ্ধান্ত দিবে তা-ই আমরা চূড়ান্ত করবো।’
চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর চারজন নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলাতেও প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। গতবার জয়ী হওয়া উপজেলাগুলোতে পুরানো প্রার্থীরাই বহাল থাকতে পারেন। যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছিল সেখানেই নতুন প্রার্থী আসতে পারে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আগামী ২৭ জানুয়ারি পার্টি অফিসে তৃণমূলের সভা আহবান করেছে। সে সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগও গত বৃহস্পতিবার বর্ধিত সভা করে কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের আটটি উপজেলার মধ্যে এবার কর্ণফুলীতে নির্বাচন হবে না। বাকি সাতটি উপজেলার মধ্যে আনোয়ারা ও বোয়ালখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতলেও বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া উপজেলায় বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপি প্রার্থীরা জয়ী হন। এরমধ্যে চন্দনাইশ থেকে জয়ী হওয়া এলডিপি প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। উত্তর জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে মিরসরাই ও হাটহাজারী আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছিল। স›দ্বীপ, সীতাকুÐ, রাউজান, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন।
বোয়ালখালী থেকে জয়ী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎসময়ের সভাপতি আতাউল হক। প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা এবারো মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে বোয়ালখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের নিজ এলাকা হওয়ায় প্রার্থী মনোনয়নে তাঁর ইচ্ছের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আনোয়ারায় গতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা তৌহিদুল হক চৌধুরী। এবারও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের আস্থাভাজন তৌহিদুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পাবেন বলে জানা গেছে। তবে সেখানে আরো কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী সক্রিয় থাকায় শেষ পর্যন্ত ভূমিমন্ত্রীর ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে।
রাউজানে এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন একেএম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল। গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে উপস্থিত সব নেতারা বাবুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একইসাথে গত দুই মেয়াদে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার পুরস্কার স্বরূপ এবার একক প্রার্থী হিসেবে এহেছানুল হায়দর বাবুলের নামই প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রাঙ্গুনিয়ায় প্রার্থী কে হচ্ছেন তার নির্ভর করছে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সিদ্ধান্তের উপর। গত নির্বাচনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আলী শাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে এবারো তাঁর প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা বেশি। একইভাবে স›দ্বীপে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাস্টার মো. শাহজাহান ও সীতাকুন্ডে এস এম আল মামুনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গতবার এম তৌহিদুল আলম নির্বাচিত হলেও এবার তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগও তার সাথে নেই। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহাজোট প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর আস্থাভাজন হওয়ায় তার মনোনয়ন পাওয়াটা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের রাউজানে নিয়মশৃঙ্খলা আছে। স্বাধীনতার পর ৩০ বছর এলাকায় যেতে পারি নাই। ১৯৯৬ সালের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ২০০১ সালে আবারো মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। ২০০৮ সালের পর সংসদ সদস্যের ইচ্ছা ও সহযোগীতায় ক্লিন ও গ্রীণ সিটি হয়েছে রাউজান। বৃক্ষরোপণে রাউজান এবার শ্রেষ্ঠ উপজেলা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। তৃণমূলের উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি আমাকে আবার নির্বাচনে প্রার্থী করতে একমত পোষণ করেছে। আমাকেই একক প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করেছে। নির্বাচিত হলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষাবিস্তার ও প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবো। এই জনপদ হবে শিল্পনগরী রাউজান, মাদকমুক্ত রাউজান।
সীতাকুÐ উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাঁচ বছর এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন কাজ করেছি। মেয়াদকালীন সময়ে কোন অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম না। শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছি। সে হিসেবে তৃণমূল থেকে আমার নামই যাওয়ার কথা। নেত্রী মনোনয়ন দিলে আবারও সাধারণ মানুষের জন্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বো। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য আদেশ।’
চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘তৃণমূলের সবাই আমার পক্ষে আছে। আমি মনোনয়ন চাইবো এবং পাব। অন্যরাও মনোনয়ন চাইতে পারেন। কারণ, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের অধিকার আছে। থানা ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দিবেন আমি ও আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।’
এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পরাজিত হওয়া ছয় উপজেলায় প্রার্থী জটিলতা দিনদিন বাড়ছে। প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলার নেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। এসব উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জসীম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার প্রার্থীতা পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। হাটহাজারীতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুচ গনি চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক জসীম উদ্দিন শাহ্, পরিবহন নেতা মনজুরুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলম এবং পটিয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান, সাবেক সভাপতি রাশেদ মনোয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাতকানিয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. সাইফুদ্দিন সিদ্দিকি এবং লোহাগাড়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়–য়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন হিরু, জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল আলোচনায় আছেন।
বাঁশখালীতে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাবেক কারা পরিদর্শক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ডা. ফররুখ আহমদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মোজাম্মেল হক সিকদার, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মো. গালিব মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বাঁশখালী উপজেলা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে আছি। কখনো মাঠ ছেড়ে যাইনি। আমার নামই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করবে। আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
লোহাগাড়া থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়–য়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। তবে বিষয়টি নেতাদের এখতিয়ার। জেলা ও উপজেলার নেতারা চাইলে আমি নির্বাচন করবো।’