উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি

37

মাঝে একাদশ সংসদ নির্বাচন দিয়ে ভোটের লড়াইয়ে ফিরলেও এরপর আবার বর্জনের ধারায় যাচ্ছে বিএনপি। আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলার পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দুটির তফসিল হলে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বৈঠক শেষে বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না’, তাই তাদের এই সিদ্ধান্ত।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। তবে তারপর স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছিল। খবর বিডিনিউজের
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নানা দাবি তুলে তাতে সাড়া না পেলেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই অংশ নিয়েছিল তারা, সেজন্য গড়ে তুলেছিল নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই নির্বাচনে ফলাফলে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের বিপরীতে ধানের শীষের ভরাডুবির পর ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশ না নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেলেন বিএনপির নেতারা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছিলেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনগুলোতে অংশ না নিয়ে বিএনপি ২০১৪ সালের মতোই ‘ভুল’ করবে। এর মধ্যেই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা।
ফখরুল বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন এগুলোতে আমরা অংশ নিচ্ছি না। আমরা মনে করি, এই সরকারের অধীনে ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় এই ধরনের নির্বাচনগুলোতে শুধু প্রহসনের উপনীত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
যেহেতু প্রমাণিত হয়ে গেছে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এখানে কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সেই কারণে আমরা এই নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচিছ না। এটা আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত।
স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাসের মাথায় আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য এই পদে উপনির্বচনের জন্য গত বছর ইসি তফসিল দিয়েছিল। তখন বিএনপি প্রার্থী ঠিক করেছিল দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। সেবার আদালতে এই নির্বাচন আটকে যায়।
উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী মার্চ মাসে। কয়েকমাস ধরে পাঁচ ধাপে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের আগে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও অংশ নেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আবদুল কাইয়ুম, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাখাওয়াত হাসান জীবন প্রমুখ।
মিলাদের পর দলের আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবেদীন, আমিনুল হক, নিতাই রায় চৌধুরী, এজে মোহাম্মদ আলী, আবদুর রেজ্জাক খান, মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ।