উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন

53

সন্ধ্যা ৬টা। চেরাগি পাহাড় মোড়ে রাস্তায় পাশেই একটি প্রজেক্টরকে ঘিরে মানুষের জটলা। তারা মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছেন। কেউবা মোবাইল ফোন দিয়ে ছবিও তুলছেন। জটলা ঠেলে সামনে এগোতেই দেখি, প্রদর্শিত হচ্ছে গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের তথ্যচিত্র। সে ভিডিও চিত্রে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নিজেই বলছেন, সবাইকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি, নৌকায় ভোট দিন। কেন আপনি নৌকায় ভোট দিবেন? সে প্রশ্নের জবাবে প্রজেক্টরের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে একের পর এক উন্নয়নের চিত্র।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, শুধু চেরাগির মোড়ে নয়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রদর্শিত হচ্ছে ‘কেন আপনি নৌকায় ভোট দিবেন? শীর্ষক এ তথ্যচিত্রটি। এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। শৈশবকাল থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমার ধ্যানে জ্ঞানে মিশে গেছে। তাছাড়া আমি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সবমিলিয়ে স্বাধীনতার প্রতি, দেশের প্রতি আমার দায়িবদ্ধতা বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়ভার তুলে নিয়েছেন। এরপর থেকে কি পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, সেটা নগরবাসী প্রত্যক্ষ করছে। এখন সময় এসেছে সেই নেত্রীকে আবার ক্ষমতায় আনার। আমরা সাধারণত ভুলে যাই। কেননা উন্নয়নগুলো একদিনে হয়নি, হয়েছে দশ বছর ধরে। তাই অনেকে হয়ত স্বাধীনতা বিরোধীদের মিথ্যা প্ররোচণায় পা দিতে পারেন। তাই তাদের জানান দিতে চট্টগ্রামের কি পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, কি কি হয়েছে, সেসব নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন করেছি। যেটি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নগরবাসীদের সামনে প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি নিজেই এটিতে কণ্ঠ দিয়েছি,কেননা আমার কণ্ঠে শুনলে নগরবাসীর মনোযোগ ভালভাবে আকর্ষণ হবে। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কেউ যদি তথ্যচিত্রটি দেখে, তাহলে সে নিশ্চিত নৌকায় ভোট দিবে। তার বিবেক তাকে নৌকায় ভোট দিতে তাড়িত করবে। কেননা এমন উন্নয়ন চট্টগ্রামবাসী আর দেখেনি।
নগরবাসীকে নৌকায় ভোটদানে উদ্বদ্ধকরণে নির্মিত এ তথ্যচিত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ তথ্যচিত্রটি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেখানো হচ্ছে। নগরীর নিউ মাকের্ট, আন্দরকিল্লা, জামালখান, জিওসি মোড়, ওয়াসা মোড়, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বারিকবিল্ডিং, ফকিরহাট, নিমতালা, সল্টগোলা, ইপিজেড়, বন্দরটিলা, সিমেন্টক্রসিং, স্টিল মিলস, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হচ্ছে। ১৫মিনিট ৪ সেকেন্ডের এই তথ্যচিত্রটিতে স্বয়ং মেয়র কণ্ঠ দিয়েছেন।
এই তথ্যচিত্রে নগরীতে শেষ হওয়া এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের দৃশ্য তুলে ধরা হয়। এতে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই নগরের নাগরিক সেবা বৃদ্ধির জন্য এবং পরিকল্পিত একটি নগর গড়ার জন্য সহায়তা করেছেন। চট্টগ্রামের কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তিনি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করে প্রকল্প সহায়তা করেছেন। এই সব প্রকল্পের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও জনগণ গভীরে গিয়ে বুঝতে পারছেন কিনা তাতে সন্দেহ আছে বিধায় সরকারের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরার লক্ষে এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয় বলে মেয়র উল্লেখ করেন। এছাড়া গত ১০ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল ইতোমধ্যে দেশের জনগণ পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশ এখন দরিদ্র বা স্বল্পোন্নত দেশ নয় ,নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। এ সরকারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হবে। মেয়র বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী নগরবাসীর উদ্দেশ্য বলেছিলেন আপনারা আমার উপর আস্থা রাখুন। আমাকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করুন। তাহলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজে নিব। প্রধানমন্ত্রী কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, সরকার গঠনের পর দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেকটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল, বন্দরের ৩টি গ্যান্টিক্রেন স্থাপন, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত রিভার ড্রাইভ রোড় নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোড় নির্মাণ, নগরীর রাস্তাঘাট টার্মিন্যালসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ উন্নতকরণের জন্য প্রকল্প, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণে সক্ষমতা বড়ানোর প্রকল্প, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ, কালুঘাটে সাড়ে ১০ একর জায়গায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ, অত্যাধুনিক কসাইখানা নির্মাণ, কিচেন মার্কেট র্নির্মণসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবে সিটি মেয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করেন।