উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা দরকার

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের পথে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহব্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। সে জন্য আপনাদের সকলকেই প্রচেষ্টা নিতে হবে। সকলেই সেই প্রচেষ্টা নেবেন এবং সেটাই আমি আশা করি।
শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘৪২ তম জাতীয় সমাবেশ-২০২২’ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফীপুরস্থ আনসার ভিডিপি একাডেমীর মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি অর্জন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থনীতিও যথেষ্ট শক্তিশালী হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি আপনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কাজেই সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন সেটাই আমি আশা করি।
তিনি এ প্রসঙ্গে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও এ অঞ্চলের মানুষকে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মুক্ত রাখা এবং উন্নত জীবন দেয়ার লক্ষ্যে শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। সরকার প্রধান বলেন, এই পরিকল্পনা আমি দিয়ে গেলাম যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আর কখনো কেউ ব্যাহত করতে না পারে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ব্রডব্যান্ড প্রতি ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে, মহাকাশে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি, অনলাইনে সমস্ত কাজকর্ম হচ্ছে। ভূমি পড়র্চা থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন ডিজিটালাইজড হচ্ছে। করোনার মধ্যে আর্থিক প্রণোদনাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি- সে ভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। খবর বাসসের।
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময়ে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। তাদের জন্য জমি দিচ্ছি, ঘর করে দিচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে আরো জ্বালানোর যে ঘোষণা দিয়েছিলাম-সে অনুযায়ী ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আনসার সদস্যদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। মোট ১৬২ জন আনসার সদস্য পদক লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং তাঁকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদনও জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশকে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। আর এ ক্ষেত্রে এই বাহিনী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদ দমনে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ এবং আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের উন্নয়ন মানেই প্রতিটি পরিবারের উন্নয়। তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবার স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করুক, সুন্দর ভাবে বাঁচুক-সেটাই আমরা চাই। সে জন্যই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভিডিপি সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ, আমরা চাই তারা যার যার এলাকায় গিয়ে কাজ করবেন। আর একটি বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি ‘বাংলাদেশ আনসার ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট’ নামে একটি ফান্ড গঠন করা হবে। যারা অসুবিধায় পড়েন বা বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়লে ওই ট্রাস্ট থেকে যাতে সাহায্য সহযোগিতা করা যায় সেজন্য সীড মানি দিয়ে এই ট্রাস্ট ফান্ড আমরা করে দেব।
একই সঙ্গে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে অবস্থিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্কুল এবং কলেজে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা এ সময় ক্রীড়া ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন করায় আনসার সদস্যদেরকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার সদস্যদের বীরত্বের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহব্বানে সাড়া দিয়ে এ বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ১২ জন বীর আনসার সদস্য মুজিব নগরের আ¤্র কাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এ বাহিনীকে করেছে গৌরবান্বিত।
তিনি ভাষা শহিদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ৬৭০ জন বীর আনসারসহ সকল শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আনসার একাডেমিতে নব-নির্মিত ‘মুজিব প্রাঙ্গণ’, কেন্দ্রিয় মসজিদ সহ আনসার সদস্যদের বিভিন্ন স্থাপনার ও উদ্বোধন করেন।