উন্নত দেশ গড়তে ভূমিকা রাখছে বেসরকারি খাত

31

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষে বেসরকারি খাত কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষে ‘এফবিসিসিআই ইন্সটিটিউট ফর ইকনোমিক পলিসি প্ল্যানিং এন্ড ডিজাইন’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আর ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এফবিসিসিআই দেশের চেম্বারগুলোর সাথে আলোচনার এ উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল সোমবার নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাথে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮টি চেম্বারের এক সভায় এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এসব কথা বলেন। এসময় এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেম্বারগুলোর সভাপতিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই ‘এফবিসিসিআই বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাকাঠামো তৈরি করা হবে। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে প্রকৌশল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ‘এফবিসিসিআই ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। আর পূর্বাচলে সরকারের দেয়া ১ একর জমির ওপর ‘এফবিসিসিআই আইকন’ ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখান থেকে আগামী দিনের এফবিসিসিআই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবে। সেই সাথে এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি বাণিজ্যিক সবধরনের বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ‘এফবিসিসিআই আর্বিট্রেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন যোগ্য নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইতে শেখ ফজলে ফাহিম আগামী দিনের নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিনি শেখ ফজলে ফাহিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এফবিসিসিআই একটি সুনির্দিষ্ট ভিশন নিয়ে কাজ করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ী নীতিমালা প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। ব্যবসা-বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা রাজস্ব প্রদানে আগ্রহী হন। শেখ ফজলে ফাহিম এর নেতৃত্বে এফবিসিসিআই বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, দেশের সকল চেম্বারসমূহের উন্নয়নে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠা প্রয়োজন। শেখ ফজলে ফাহিম আগামী দিনে এফবিসিসিআই এর ভবিষ্যৎ সভাপতি হিসেবে চেম্বারসমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। এ লক্ষ্যে শেখ ফজলে ফাহিমকে পূর্ণ সমর্থন জানান তিনি। এছাড়া দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘বিশেষায়িত ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় একটি শিল্প পার্ক স্থাপন এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আহবান জানান তিনি।
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহুমাত্রিক পর্যটন উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। এ কার্যক্রমকে আরো বেশি জোরালো করা প্রয়োজন। এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। এ অঞ্চলের ব্লু -ইকোনোমিকে প্রসারিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।
খাগড়াছড়ি চেম্বারের সভাপতি কংজরী চৌধুরী পার্বত্য অঞ্চলের সম্পদকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীদের দিকে নজর দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের প্রসার ঘটানো যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন করেন তিনি।
রাঙামাটি চেম্বার সভাপতি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রাঙামাটি লেকের বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ জেলার পর্যটন শিল্পের প্রসার করা যেতে পারে। এই জেলায় ধর্মীয় এবং চিত্তবিকাশ – উভয় খাতের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারতের সাথে রাঙামাটি জেলার ঠেকামুখ স্থলবন্দরকে অপারেশনাল করা হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
বান্দরবান উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লালছানী লুসাই বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নীতিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিদেশ সফরে এফবিসিসিআই এর প্রতিনিধি দলে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানো প্রয়োজন। পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখে তিনি রিসাইক্লিং শিল্পের উপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।
নাসিব এর সভাপতি নুরুল গণী শোভন বলেন, শেখ ফজলে ফাহিম এর নেতৃত্বে আগামী দিনে এফবিসিসিআই ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি ইনফরমাল সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ এবং এসএমই খাতে ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।
বান্দরবান চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি লক্ষীপদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে পার্বত্য জেলাগুলোর সম্পদ ও সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ্ বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদল বিদেশ সফরের সময় সংশ্লিষ্ট সকল খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক ওসমান গণি ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনতে বেসরকারি ব্যাংকসমূহের পরিচালনা ব্যয় হ্রাস করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই পরিচালক মো. বজলুর রহমান, হাসিনা নেওয়াজ, মো. কোহিনুর ইসলাম, মো. আনোয়ার সাদাত সরকার, প্রবীর কুমার সাহা, মো. রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি, তাবারুকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, মাসুদ পারভেজ খান (ইমরান), মো. নিজাম উদ্দিন, আজিজুল হক, সজীব রঞ্জন দাস ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।