উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে

37

রাজধানীতে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলা বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েও অভিযানে নামেনি পুলিশ। এমনটি অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের চিঠিসহ স্মারক নম্বর উল্লেখ করে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গতবছর ২০১৭ সালের ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-২ শাখার তৎকালীন উপসচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর লেখা চিঠিতে রাজধানীতে ক্যাসিনো নামক জুয়ার আস্তানায় জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠিতে রাজধানী ঢাকার ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ফুয়াং ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, সৈনিক ক্লাব, এজাক্স ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব ও পল্টন থানাধীন পুরানা পল্টনে অবস্থিত জামাল টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি ক্যাসিনোর বিষয় উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে। পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ মেট্রোর মাধ্যমে তা বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হয়। এরপর ডিএমপি জামান টাওয়ারসহ দুইএকটি ছোট ছোট অভিযান চালায়, কিন্তু অদৃশ্য কারণে পুলিশ কোন অ্যাকশনে যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের মাসোহারা আর ক্ষমতাসীন দলের কয়েক প্রভাবশালী নেতার বিশেষ প্রশ্রয়ের কারণে দেখেও না দেখার ভান করত পুলিশ। এমন অভিযোগও উঠেছে, চলমান সাঁড়াশি অভিযানের সময় অনেক ক্যাসিনোর বিদেশি অংশীদারের পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেই এসব জুয়ার আসর এবং নিজ দলের সহযোগী সংগঠনের দুর্বৃত্যপরায়ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানোর পর পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়, গ্রেফতার করা হয় সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে। সূত্র জানায়, ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির কারণে গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া শামীম ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজ এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টদের। পিলে চমকে ওঠা তথ্যে অনেকটাই বিব্রত তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানকালে কিছু পুলিশের ভূমিকা গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আরামবাগ ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো পরিচালনায় যুক্ত ১৯ নেপালিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তিন পুলিশ সদস্য- সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে ওঠা এ অভিযোগের তদন্ত হওয়া জরুরি। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, যে রাতে ফকিরেরপুলের ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান চালায় র‌্যাব, সেই রাতেই সাদা পোশাকের তিন ব্যক্তি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সেগুনবাগিচা এলাকার একটি ফ্ল্যাটের পাঁচতলায় গিয়েছিলেন। তাদের একজনের হাতে ওয়াকিটকিও ছিল। ওই ফ্ল্যাটে নেপালিরা থাকতেন। পুলিশ পরিচয় দেয়া তিন ব্যক্তি চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নেপালিরা একে একে বেরিয়ে যান। আমরা মনে করি এ ঘটনায় সত্যিই পুলিশ সদস্যরা জড়িত থেকে থাকলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, দীর্ঘদিন থেকে ক্যাসিনোয় জুয়া, মদ ব্যবহার ইত্যাদি কালচার চলে এলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতদিন পর কেন তৎপর হল? বলার অপেক্ষা রাখে না, খোদ প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নামধারী কয়েক নেতাকর্মীদের কর্মকাÐে বিরক্তি প্রকাশ না করলে হয়তো বুধবারের অভিযান পরিচালনা করা হতো না। হয়তো সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা বলেই এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ছিল। তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে না, সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে? এটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে, ক্লাব ও ক্যাসিনো কালচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সমাজের প্রভাবশালীদের একটি বড় অংশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও যে বিষয়গুলো জানতেন। আমরা মনে করি, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা করি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।