উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ চলছেই নিহত বেড়ে ১৫

20

নতুন নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে শনিবারও উত্তপ্ত রয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশ। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে রাজ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল থেকেই উত্তর প্রদেশে রামপুরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পাশাপাশি ব্যাপক ধরপাকড়ও চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেবল প্রয়াগরাজেই ১৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। গাজিয়াবাদে আটক করা হয়েছে ৬৫ জনকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের মীরাট শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। ওই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পিষ্ট হয়ে আট বছরের এক শিশুও মারা গেছে। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি ওপি সিংহের দাবি, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে জনতা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশই গুলি চালিয়েছে। সংঘর্ষের সময় পাথর ছোড়া ও পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। খবর বার্তা সংস্থার
এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর শুক্রবার রাত থেকেই বিজনৌর, মীরাট, ফিরোজাবাদ, কানপুর, সম্বল, মোরাদাবাদ, আলীগড়, এলাহাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের।
দেশজুড়ে চলমান এমন বিক্ষোভের মধ্যে সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র নেত্রী মায়াবতী। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মায়াবতী। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহŸানও জানিয়েছেন তিনি। এক টুইটে মায়াবতী লিখেছেন, ‘এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে এখন এনডিএর (বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট) মধ্যেই মতপার্থক্য গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অতএব এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। সেই সঙ্গে সকলে যাতে কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করেন, সেই আহŸানও জানাচ্ছি।’
এর আগে গত শুক্রবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভের সময় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিসহ ৫০ জনকে আটক করা হয়। শর্মিষ্ঠা নারী কংগ্রেসের দিল্লি শাখার প্রধান।
উদ্বেগ দূর করতে বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের নতুন এক ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যারা ভারতে জন্মেছেন, তারা সকলেই ভারতের নাগরিক। এছাড়া ১ জুলাই ১৯৮৭ সাল থেকে ৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এর মধ্যে যারা জন্ম নিয়েছেন এবং যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কোনও একজন ভারতের নাগরিক, তিনিও ভারতীয়। পাশাপাশি ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের পরে যারা জন্মেছেন এবং যাদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতের নাগরিক কিংবা একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্য জন সেই সময়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ নন, তারাও ভারতের নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। তাদের ভাষ্য. ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মের নথি বাধ্যতামূলক ছিল না; নথি না থাকলে তারা এখন কী দেখাবেন?
তাছাড়া, ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পরে জন্মানো কেউ যদি বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনও এক জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে না পারেন, তা হলে তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু তিনি যেহেতু ভারতে জন্মেছেন, তাই অ-মুসলিম হলেও নিজেকে শরণার্থী হিসেবে দাবি করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে পারবেন না।
দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দমনে এ ধরনের ‘নতুন নতুন ব্যাখ্যা’ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা বিরোধীদের।