উত্তর কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এক প্রার্থীর ভোট!

35

উত্তর কোরিয়ায় রবিবার (১০ মার্চ) অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। ‘সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি’ নামে পরিচিত দেশটির সংসদের এই নির্বাচনে প্রার্থী প্রায় ৭০০ জন। কিন্তু প্রত্যেকে আসনে প্রার্থী মাত্র একজনই; ব্যালটে থাকে না কোনও বিকল্প প্রার্থীর নাম। ভোটারদের দিতে হয় না কোনও সিল বা টিক মার্ক। সংশ্লিষ্ট আসনের জন্য নির্ধারিত প্রার্থীর নাম লেখা ব্যালট হাতে নিয়ে সেটাই বাক্সে ফেলতে হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর চালু হয় পুলিশি নজরদারি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভোটের রীতি ভঙ্গকারীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দেওয়া হয়।ত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের শাসনকালে এটি দেশটির দ্বিতীয় নির্বাচন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে ‘সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলির’ (এসপিএ) প্রায় ৭০০ সদস্য নির্বাচিত হন ‘জনগণের ভালোবাসায়।’ ভোট পড়ে প্রায় শতভাগ। ফলে শাসক পরিবার প্রতিবারই প্রায় সর্বসম্মতভাবে জয়লাভ করে। এর আগের নির্বাচনগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ ফিওদোর টেরটিটস্কি জানিয়েছেন, ভোটের দিন শাসক পরিবারের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা ‘দেখাতে’ নাগরিকরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন। শুরু থেকেই কেন্দ্রগুলোতে থাকে দীর্ঘ লাইন। সেখানে প্রত্যেক ভোটারের হাতে একটি করে ব্যালট পেপার দিয়ে দেওয়া হয়। তাতে একজন প্রার্থীরই নাম থাকে।
ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে তা ভরতে হয় সবার সামনে রাখা একটি ব্যালট বাক্সে। পাশে একটি আড়ালে রাখা ব্যালট বাক্সও থাকে। কিন্তু কেউ আড়ালে গিয়ে বাক্সে ব্যালট ফেলার চেষ্টা করলে তার বিষয়ে সরকারের সন্দেহ তৈরি হয়। বিবিসি আরও লিখেছে, তাত্ত্বিকভাবে ব্যালটে থাকা প্রার্থীর নাম কেটে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি তা করে তাহলে তার বিষয়ে তৎপর হয় গোয়েন্দা পুলিশ। এমন ব্যক্তিদের অতীতে ‘মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়ে ছেড়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকার। ভোট দেওয়াই শেষ নয়। ভোটকেন্দ্র থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসতে হয় ভোটারদের, যাতে প্রকাশ পায় এক দলীয় শাসন ব্যবস্থায় থাকা উত্তর কোরিয়ার ‘জ্ঞানী নেতৃত্বকে’ ভোট দিতে পেরে আনন্দ অনুভূত হচ্ছে! এনকে নিউজ নামের উত্তর কোরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইটের সঙ্গে জড়িত মিনইয়ং লি। এই উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ‘দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে ভোটের দিনটিকে খুবই উৎসবমুখর একটি দিন হিসেবে প্রচার করা হয়। ভোটকেন্দ্রের সামনে খুশি প্রকাশ করা ভোটারদের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।’
বিবিসি জানিয়েছে, যেহেতু ১৭ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী উত্তর কোরীয় নাগরিকদের ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেহেতু ভোটের দিনটি আসলে একরকম আদমশুমারি কার্যক্রম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যারা ভোট দিতে যায় না, ধরে নেওয়া হয় তারা চীনে পালিয়ে গেছে।
যে সংসদ নিয়ে এই ভোটের আয়োজন, তাকে বিবিসি ‘রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট’ আখ্যা দিয়েছে। কার্যত এর কোনও ক্ষমতাই নেই। আইন যা করার দলের ইচ্ছেনুযায়ীই তা তৈরি হয়। পরে সংসদে পাস করানোর আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয়। টেরটিটস্কি মন্তব্য করেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলে থাকে, উত্তর কোরিয়া সংসদের ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু তা সত্য নয়। আসলে সংসদ পুরোপুরি ক্ষমতাশূন্য।’