উচ্চতর গণিত পরীক্ষা দিতে পারেনি অনেক পরীক্ষার্থী

88

চলমান এইচএসসি পরীক্ষার পাঁচটি বিষয়ের সূচি পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি ভুল প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় বিপন্ন হতে চলেছে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল সংবাদের কারণে ৬ মে অনুষ্ঠিত সকাল বেলার উচ্চতর গণিত (২য় পত্র) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী।
৪ ও ৬ মে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা বিকালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও উচ্চতর গণিত (২য় পত্র) পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ৬ মে সকালে। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় একটি অনলাইন সংবাদপত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৪, ৬ ও ১২ মে সব পরীক্ষা সকালের পরিবর্তে বিকালে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ওই রিপোর্টটি ধরে নিয়ে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী ৬ মে অনুষ্ঠিত সকাল বেলার উচ্চতর গণিত (২য় পত্র) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
গত ৯ এপ্রিল ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। এতে বলা হয়েছিল, ১৭ এপ্রিলের পরীক্ষা ৯ মে বিকালে, ১৮ এপ্রিলের পরীক্ষা ১১ মে বিকালে, ২২ এপ্রিলের পরীক্ষা ১২ মে বিকালে এবং ৪ ও ৬ মে পরীক্ষা সকালের পরিবর্তে বিকালে অনুষ্ঠিত হবে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র কারণে ৪ মে পরীক্ষা আবার পিছিয়ে ১৪ মে করা হয়।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক এর বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনটি গত ৮ এপ্রিল তাদের নিজস্ব নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করেছিল। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বিডি নিউজের প্রতিবেদনটিতে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কোন বিষয়ের পরীক্ষা বিকালে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করেননি প্রতিবেদক। ফলে ভুল তথ্যের নিউজটি পরের দিন বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এদিকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ৭ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। এ প্রজ্ঞাপনটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ২২ এপ্রিলের সকাল বেলায় পদার্থ বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) ২য় পত্র, যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র এবং হিসাব বিজ্ঞান ২য় পত্রের পরীক্ষা ১২ মে সকালে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৪ ও ৬ মে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা বিকালে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় বিডি নিউজ ২৪ ডটকমের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৪, ৬ ও ১২ মে সব পরীক্ষা সকালের পরিবর্তে বিকালে অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো নোটিশও পরীক্ষার্থীদের অবহিত করেনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও। জানা গেছে, এ বিভ্রান্তিতে পড়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন বোর্ডের বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী ওই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। ফলে পরীক্ষা দিতে না পারা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন তাদের বাবা-মা। উচ্চতর গণিত ২য় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা কয়েকজন পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর হলো-৬০৩৩৯৩, ৬০৩৩৯৪, ৬০৩৩৫৮, ৬০৩৩৮৮, ৬০৩৩৫৩।
এ ব্যাপারে সরকারি নাজিরহাট কলেজ কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার কাছে কিছু অভিভাবক এসেছেন। তাদের ছেলেরা উচ্চতর গণিত পরীক্ষা দিতে না পারায় কান্নাকাটি করছে। তবে এটি হয়েছে পত্রিকায় ভুল রিপোর্টের কারণে। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষেরও কোনো দায় নেই। তবে বোর্ডের প্রজ্ঞাপন যখন আমরা পাই তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষার্থীদের নোটিশ করার সুযোগ থাকে না।’
উত্তম আচার্য্য নামে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে (রোল-৬০৩৩৫৩) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে গতবার (২০১৭-২০১৮) এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৩৩ পেয়েছিল। ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আশায় সে এবার ইমপ্রæভমেন্ট দিচ্ছিল। কিন্তু পত্রিকায় ভুল রিপোর্টের কারণে সে উচ্চতর গণিত ২য় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও আমার ছেলেসহ আরও যারা উচ্চতর গণিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করছি।’
আবু মুছা নামে এক পরীক্ষার্থী (রোল-৬০৩৩৯৩) বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডের বিন্দুমাত্র গাফিলতি নেই। পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন নিয়ে ভুল রিপোর্ট হয়েছে পত্রিকায়। তাহলে আমাদের শিক্ষা জীবন বিপন্ন করার দায় কার? তাই মানবিক কারণে হলেও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে আমার আকুল আবেদন আমাদের পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’