উখিয়া-টেকনাফে উপকূলজুড়ে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম

118

উখিয়া ও টেকনাফের জেলে পল্লীতে মাছ শুকানোর ধুম পড়েছে। শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে শুঁটকি মাছে রুপান্তর করার কাজ পুরোদমে চলছে। এদিকে এই সময়ে সাগরে মাঝিদের ফিশিং ট্রলারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ছে। আর এ সুযোগে সাগরের কাঁচা মাছ সহনীয় দামে ক্রয় ও সংগ্রহ করা হয়। এসব মাছ রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যস্ত সময় পার করছেন শুটকি পল্লীর বাসিন্দারা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, টেকনাফ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুইপাশে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি পল্লীতে মাছ শুকানো কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এছাড়াও টেকনাফের নাজির পাড়া, জাইল্লা পাড়া ও শাহপরীর দ্বীপে শুঁটকি মাছের বড় পল্লী রয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আধুনিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে কাঁচা মাছ শুকানো হয়। এদিকে মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রত্যেক পরিবারের নারী পুরুষ থেকে শুরু করে ছেলে মেয়েরা পর্যন্ত সাগরের কাঁচা মাছ রোদে শুকানোর কাজে নেমে পড়েছেন।
উখিয়ার মন খালি গ্রামের আমির হামজা ও মোহাম্মদ তৈয়ব টেকনাফ উপজেলার জাহাজপুরা গ্রামের আলী আকবর এবং মারিশ বুনিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে কাঁচা মাছ শুকানোর মোক্ষম সময়। আর এ সময় সাগরে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ে প্রচুর। তাদের মতে কম মূল্যে সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ ক্রয় করে তারা রোদে শুঁকিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে শুটকি মাছে পরিণত করে।
জানা যায়, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরের ব্যবসায়ী মহাজন এবং স্থানীয় পাইকাররা অগ্রিম টাকা দেয় শুটকি পল্লীতে। প্রতিদিন পিক আপ ও মিনি ট্রাক ভর্তি করে শুটকি মাছের চালান দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ছুরি মাছ প্রতি মন ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা, ফাইস¦া মাছ ১৪ থেকে ১৬ হাজার, লইট্টা ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা ও পোয়া মাছ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অগ্রীম দাদন নিলে মূল্য আর কম দামে পাওয়া যায়।
শুঁটকি পল্লীতে বসবাসকারী লোকজন জানান, লবণের পানি ব্যবহার করে কাঁচা মাছ গুলো রোদে শুকানো হয়। কোন অবস্থাতেই কীটনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে না তারা।
স্থানীয়রা জানায়, প্রক্রিয়াজাতকরণে বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে গুণগত মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হতো। অথচ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা কোন প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই এখানকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যজীবীরা কাঁচা মাছ রোদে শুঁকিয়ে শুটকি মাছে রূপান্তর করছেন।
এখানকার মাছ বেশি স্বাদ ও মজাদার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তবে মানসম্মত শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন কর্মজীবী শ্রমিকরা।