উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দূষিত বর্জ্যে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

54

উখিয়ার বালুখালী পানবাজারের দক্ষিণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার বোরোর আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের দূষিত বর্জ্য স্থানীয় বালুখালী খালের মাধ্যমে ফসলের জমিতে মিশে যাওয়ায় এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। ফসলে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করেও শেষরক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
সরেজমিন উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পালংখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দূষিত বর্জ্য ক্যাম্প থেকে সরাসরি চলে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী ফসলি জমি ও ক্ষেত-খামারে। যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় হতদরিদ্র কৃষকেরা। রোহিঙ্গার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সহায়তার বিষয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা প্রতিশ্রæতি ও আশ্বাস দিয়ে আসলেও তেমন কোন সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
বালুখালী এলাকার সোনা মিয়া জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে আমাদের পূর্ব পুরুষের ভোগ দখলীয় চাষাবাদের জমি হারিয়ে ফেলেছি। এমনকি অনেকে নিজ বসতভিটাও হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। সেই থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের বিভিন্ন সহযোগিতার বাণী শুনিয়ে আসলেও মূলত এসব ছিল প্রতারণার ফাঁদ।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন ভুট্টো জানান, তার ২ একরের বেশি ফসলি জমি রোহিঙ্গার বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ফসল চাষাবাদে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু এক টাকাও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি অভিযোগ করে জানান, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা বালুখালী খালটি খননের কথা বলে অনেক টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু খননের কাজ হয়নি। যার কারণে খালের দুইপাশ দিয়ে ক্যাম্পের বর্জ্য ফসলি জমিতে মিশেছে। ওই এলাকায় অন্তত ৫০ একরের বেশি জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একইভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জামতলি এলাকার বোরো আবাদ। জামতলির শফিউল্লাহকাটায় দুটি ক্যাম্পের মাঝে বোরোর আবাদ করেন মো. কালু নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি। ৫ একরের বেশি জমিতে চাষবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্ষতিকর বর্জ্যরে কারণে অন্তত শতাধিক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে সব ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে কৃষি জমিতে। এলাকার হতদরিদ্র কৃষকরা সহায়-সম্বল পুঁজি দিয়ে যে সমস্ত চাষাবাদ করেছে তাও রোহিঙ্গার বর্জ্যে শেষ হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে যে সমস্ত কৃষি জমিতে শাক-সবজি আবাদ করত তাও রোহিঙ্গারা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়রা চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার কৃষি জমিতে বিভিন্ন দূষিত বর্জ্যরে কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে আগাম সতর্কবর্তা জানা থাকলে ক্ষতির হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করা যেত, তবে এখন আর শত চেষ্টা করেও ফসল বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে কি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।