উখিয়ায় অবৈধ করাত কল গিলে খাচ্ছে বন

142

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন উখিয়া-টেকনাফে। তারা প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমিতে ঝুঁপড়ি নির্মাণ করে বসতি গড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণির বনসম্পদ ধ্বংসকারী মহল রোহিঙ্গা বস্তি সংলগ্ন এলাকায় সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন গাছ কেটে নিয়ে আসছে। এসব কাঠ বেআইনিভাবে করাত কলে চিরাই ও বিক্রি করলেও সংশ্লিষ্টদের কোন খবর নেই।
জানা গেছে, বন বিভাগের সংরক্ষিত সম্পদ ইতিমধ্যে সাবাড় হয়ে গেছে। এমনকি এই বন সম্পদ ধ্বংসচক্রের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্থানীয় গ্রামীণ বসতভিটার ফলজ, বনজ বৃক্ষ, সড়ক ও উপ-সড়কের ছায়াবৃক্ষ, ব্যক্তি মালিকানাধীন বনায়ন। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে নানা বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। আর বনবিভাগ বলছে, লোকবল সংকটের কারণে তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রে জানা গেছে, এক সময় বন সম্পদে ভরপুর ছিল এ উপজেলা। এর ২৪ হাজার হেক্টর বনজ সম্পদ রক্ষার মহা পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৭ সনে তৎকালীন সরকার লট নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এ উপজেলায় করাত কল পারমিট নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আইনি জটিলতার সুযোগ নিয়ে উখিয়ার রতœাপালং ইউনিয়নের মাতবর পাড়ায় ১টি স’মিলে নির্বিচারে বৈধ-অবৈধ কাঠ চিরাই অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকাশ্যে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি সংরক্ষিত বন এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে করাত কল স্থাপন করে চোরাই কাঠ চিরাই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় বন সম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বিঘেœ চোরাই কাঠ মজুদ, চিরাই ও বাজারজাতের সুযোগ থাকায় সংঘবদ্ধ বনদস্যুচক্র ও কাঠ চোরের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বন বিভাগ মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো ও দায় এড়ানোর অভিযান চালিয়ে ২/৩টি করাত কল ধ্বংস করলেও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পুনরায় কল স্থাপন করে কাঠ চিরাই অব্যাহত রেখেছে।
বন বিভাগ (তালিকা মতে) এ উপজেলায় ১৩টি অবৈধ করাত কল চালু থাকার কথা স্বীকার করলেও বিভিন্ন স্থানে ২২টি অবৈধ করাত কল চালু রয়েছে।
এসবের মধ্যে পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, পুর্ব রহমতের বিল ও তাজনিমার খোলায় ৫টি, কুতুপালংয়ে ১টি, ফলিয়া পাড়ায় ২টি, হাজির পাড়ায় ৩টি, টাইপালংয়ে ১টি, পশ্চিম ডিগলিয়াপালংয়ে ১টি, পিনজির ক‚লে ১টি, হিজলিয়ায় ১টি, জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়িতে ১টি, কোট বাজারে ১টি, মাতবর পাড়ায় ২টি, ও মরিচ্যায় ৩টিসহ মোট ২২টি অবৈধ করাত কলে দিনরাত হাজার হাজার ঘন ফুট কাঠ চিরাই ও সাইজ করছে।
করাত কল থেকে এসব কাঠ স্থানীয় হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি ও বিভিন্নস্থানে চালান হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি বনাঞ্চলের কাঠ সম্পদ লুটপাট ও সাইজ করে পাচার হওয়ার ফলে সরকার বনসম্পদ খাতে কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উখিয়ার বন রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের লোকবল সংকটের কারণে শত চেষ্টা করেও বন সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর উখিয়া বনভূমিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, অবৈধ করাত কল জব্দে বনবিভাগ সবসময় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে অভিযানের আগে মালিকরা খবর পেয়ে যাওয়ার কারণে অভিযান সফল হচ্ছে না।