উখিয়ার বালুখালী বাজারের কোটি টাকার খাস জমি বেদখল

63

উখিয়ার বালুখালী বাজারটি দিন দিন বেদখল হয়ে অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে। দোকানপাটের পরিবর্তে এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শেড ও ঘরবাড়ি। এককালের জমজমাট এ বাজার দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল প্রশাসনের নিকট একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এলাকার সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ আলম প্রকাশ- বাঘা আলম, ডা. মঞ্জুলাল বিশ্বাস জানান, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার থেকে দুটি যাত্রীবাহী বাস বালুখালী পর্যন্ত আসা-যাওয়া করায় এখানে ছিল একটি বাস কাউন্টার। বালুখালী স্টেশনের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বালুখালী বাজার নাফ নদীর ঘাট হয়ে নৌকাযোগে মালামাল নিয়ে যাত্রীরা টেকনাফ আসা-যাওয়া করত। জনশ্রæতি রয়েছে- বালুখালীর স্থানীয় বাসিন্দা মরহুম নুর আলী সিকদার বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হামিদুল হক জানান, প্রতি রবিবার ও বুধবার বালুখালী বাজারে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হত। তৎকালীন বার্মা (মিয়ানমার) হতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এ বাজারে আসত। সীমান্ত তখন এ ধরনের কড়াকড়ি ছিল না বিধায় মিয়ানমারের সব ধরনের মালামাল এ বাজারে পাওয়া যেত। যে কারণে বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের কেনাকাটার জন্য বাজারটি ছিল প্রসিদ্ধ। পাশেই ছিল বাস কাউন্টার। সেখানে যানবাহনের শ্রমিকের ছিল নিয়মিত আড্ডা। দুয়েকটি হোটেলে ছিল খাবার ব্যবসা।
এলাকার প্রবীণ লোকজন আরো জানান, তৎকালীন সময়ে বালুখালীর বাসিন্দা হিসাবে তারা গর্ব অনুভব করতেন। ১৯৬০-এর দশকেও বাজারটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কালের আবর্তে ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর চাঁদাবাজি, দৌরাত্ম্য, নির্যাতন, মালামাল কিনে টাকা পরিশোধ না করার কারণে এ বাজার ছেড়ে ব্যবসায়ীরা চলে গেছে।
শনিবার সকালে বাজারটি ঘুরে দেখা যায়, বাজারে কোনো দোকানপাট নাই। একটি সনাতনী পরিবার তার আদি পেশা কামারশিল্পের কাজ করে বাজারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মো. মনছুরের একটি মুদির দোকান ছাড়া আর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেখা মেলেনি। বাজারের হাতুড়ে ডাক্তার মঞ্জুলাল বিশ্বাস জানান, বাজার বিলুপ্ত হওয়ার কারণে তিনি এখন পান বাজারে দোকান দিয়েছেন। আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এখানে ইয়াবা সেবনকারীদের দৌরাত্ম্য, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে বাজারটি এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। বাজারের কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি দখল করে মাহামুদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছে পাকা ভবন। তার পাশে আরেক দখলদার শেড নির্মাণ করে এনজিওকর্মীদের ভাড়া দিয়েছে। এভাবে চারপাশে অর্ধশতাধিক লোকজন দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বালুখালী ঐতিহ্যবাহী বাজারটি নিয়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফখরুল ইসলাম জানান, বালুখালী বাজারে যেমসস্ত অবৈধ দখলদার রয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের জন্য আবেদন করা হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে বাজারটি দখলদারদের নিকট উদ্ধার করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।