আল্লাহর অবারিত রহমতের করুণাধারায় সিক্ত মাহে রমজানুল মোবারকের মধ্য দশক ‘মাগফিরাত’ গুনাহগার বান্দাদের পাপরাশি ক্ষমা করে বান্দার জন্য চিরস্থারী জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে অপূর্ব নেয়ামতের বারিধারা হিসেবে এ রমজানুল মোবারক। ইতোপূর্বে হাদীসেপাকের আলোকে আলোচনা হয়েছে ওই ব্যক্তি খুবই দুর্ভাগা, যে পবিত্র মাহে রমজান পেয়েছে অথচ সে তার গুনাহ ক্ষমা লাভ করেনি। তাই সকল মুমিন মুসলমানদের উচিৎ এ পবিত্র মাসে আল্লাহর দেয়া সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা।
মাহে রমজানের রোজা আদায় করলে বান্দার গুনাহসমূহ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে- হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান- ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি রমজানে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রাতগুলোতে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি শবে ক্বদরে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারী, মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হলো পরিপূর্ণ ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রোজা আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যে রোজার সাথে ঈমান ও নিষ্ঠা একত্রিত হয়ে যায় সেটার উপকার অগণিত। বস্তুত যে রোজা আল্লাহর ভয় এবং হৃদয়ের পবিত্রতা এবং চারিত্রিক মাহাত্মশূন্য হয় প্রকৃত অর্থে সে রোজার কোন মূল্য নেই। পূর্ণ ঈমান ব্যতীত অন্যকোন উদ্দেশ্যে যেমন রোগের চিকিৎসার জন্য রোজা রাখলে সওয়াব হতে বঞ্চিত হবে।
উক্ত হাদীসে রাতগুলোতে ইবাদতের মর্মার্থ হচ্ছে- তারাবিহ নামাজ যা শুধু রমজানে আদায় করা হয়। অথবা তাহাজ্জুদের নামাজ। অনেকেই শয়তানের কুমন্ত্রণায় অথবা কুসংশ্রবে মিশে অনেক গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর স্মরণ হতে এই ভেবে দূরে থাকে যে, আহা! আমার মতো পাপীর জন্য তো কঠিন জাহান্নামের শাস্তি অপেক্ষা করছে। ওইসব বান্দা একপ্রকার হতাশায় ভোগেন- কিন্তু দয়ালু আল্লাহ্ ওইসব বান্দার উদ্দেশ্যে বলেন- ‘তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়োনা।’
আল্লাহর অবারিত রহমতের আহŸান নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র রমজানুল মোবারক। অপর একটি হাদীসে এমনও বর্ণিত আছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বর্ণনা করেন- নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমজানের রোজা রেখেছে সে গুনাহ হতে এমন ভাবে পবিত্র হয়ে যাবে যেমনি ভাবে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হয়।’ (সুনানে নাসায়ী)
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ এ পবিত্র মাসে পূর্ণ ঈমান খালেস নিয়ত সহকারে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা করা। বিশুদ্ধ নিয়তে আল্লাহর করুণা লাভের প্রত্যাশায় দিনে রোজা ও রাতে নামাজে তারাবিহ, সেহেরির পূর্বে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নামাজে তাহাজ্জুদ আদায় করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন!