ঈদ আনন্দে মাতল রোহিঙ্গা শিশুরা

34

ঈদ আনন্দের ছোঁয়া লেগেছিলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। লোমহর্ষক নির্যাতনের স্মৃতি ভুলে আনন্দে মেতে ওঠে রোহিঙ্গা শিশুরা। যুবক ও বয়োবৃদ্ধদের অনেকের চোখে-মুখে বিষাদের রেখা দেখা দিলেও অধিকাংশের মুখেই ছিল হাসি। তবে মূল আনন্দটা দেখা গেছে শিশু-কিশোরদের মধ্যে।
সময়ের ফেরে বিষাদের স্মৃতি ভুলে গেছে তারা। ঈদের দিন নতুন জামা-কাপড় পড়ে ঘোরাঘুরি আর স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ছাড়াও দুরন্তপনা ও হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে শিশুরা।
জাতিসংঘের জরিপ মতে, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ ভাগ শিশু। এদের মধ্যে ৩৬ হাজার শিশু বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে।
এমনই এক শিশু মরিয়ম (১০)। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সে। তবে ঈদের আনন্দে তার চেহারা থেকে মুছে গেছে দুঃসহ যন্ত্রণা ও নির্যাতনের যাতনা। গায়ে নতুন জামা তো আছেই, মনের মতো করে সেজেছে সে।
একই অবস্থা কুতুপালংয়ের ডি-৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের। ঈদ মেলার পুরো মাঠজুড়ে নাগরদোলাকে ঘিরেই দেখা গেলো তাদের বাড়তি কৌতূহল। তবে বৃষ্টির কারণে এসব রোহিঙ্গা শিশুদের ঈদ আনন্দে একটু ভাটাও পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র কুতুপালং ক্যাম্পে নয় বরং উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩২টি ক্যাম্পে এবার বাড়তি আনন্দের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করেছে শিশুসহ বড়রাও।
কুতুপালংয়ে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনুছ আরমান বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা প্রায় দুই বছর হতে চললো। এর মধ্যে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের অনেকেই সেই স্মৃতি ভুলতে বসেছে। যে কারণে এবারের ঈদ গতবারের চেয়ে অনেক আনন্দদায়ক হয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন চলে এসেছে। ঈদের সময় শুধু শিশু নয়, বৃদ্ধদের গায়েও আমরা নতুন জামা দেখেছি। শিশুদের ঈদ আনন্দ ছিল গতবারের চেয়ে অনেক বেশি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করলো কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। নামাজ আদায়ের পর তাদের অনেকেই কোরবানিও দিয়েছে। যারা কোরবানি দিতে পারেনি, সরকার ও এনজিওর পক্ষ থেকে তাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হয়েছে।