ঈদ আনন্দে বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি

98

বিদায় নিতে চলেছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামিকাল বুধবার নয়তো বৃহস্পতিবার হতে পারে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। চট্টগ্রামে তুলনামূলক কম হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের এবারের ঈদযাত্রায় বৃষ্টির ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বিরাজমান বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবজনিত কারণে ঈদের আনন্দে বৃষ্টিও সঙ্গী হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা। পাশাপাশি বজ্রপাত এড়িয়ে চলতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঈদের দিন দেশের অধিকাংশ এলাকায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আলামত বিদ্যমান থাকার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ঈদের দিন সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের প্রায় সকল স্থানে। এছাড়া, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের ৮০ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৬০ শতাংশ এলাকায় বৃষ্টি সঙ্গী হতে পারে। বিরাজমান বৃষ্টিবলয়ের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়াসহ প্রবল বজ্রপাতও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি শুরু পূর্বক্ষণ ও চলাকালীন সময়ে বাইরে খোলা আকাশের নিচে না থেকে নিরাপদ জায়গায় অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঈদের দিন দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ূ টেকনাফ উপকূল পৌঁছাতে পারে ঈদের পর। তবে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব না থাকলেও ঈদের ছুটির দিনগুলোতে বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের মধ্য, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এসব অঞ্চলের চেয়ে বৃষ্টি কম হতে পারে। এখন বৃষ্টির সাথে থাকবে বজ্রপাত; গত কয়েকবছরে যা প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। তাই বৃষ্টিমুখর সময়ে বজ্রপাত এড়িয়ে চলতে সকলকে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে’।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। নদীবন্দরের জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, সিলেট, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারিপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর- পশ্চিম দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সমুদ্র সমতল থেকে চার দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ঊর্ধ্ব পর্যন্ত একটি সাইক্লোনিক ঘূর্ণাবর্ত বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের উপর অবস্থান করছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। এ মৌসুমী বায়ূর প্রবেশের মধ্য দিয়েই গ্রীষ্ম পেরিয়ে দেশে বর্ষা মৌসুমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করেন। বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসকে বর্ষাকাল হিসেবে ধরা হলেও মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষভাগেই মৌসুমী বায়ূ দেশে প্রবেশ করে থাকে।
বিরাজমান আবহাওয়া পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে সক্রিয় থাকা বছরের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব গতকাল সোমবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মানে খুলনার কোথাও পরিলক্ষ্যিত হয়নি। বরং ওই অঞ্চলের মংলায় সোমবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগের দু’দিন উপকূলীয় ওই অঞ্চলে ব্যাপক বজ্রপাত ও বৃষ্টি ঝরিয়ে বৃষ্টিবলয় মুখ ঘুরিয়েছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দিকে। মানে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকেই প্রভাব বিস্তার করছে বৃষ্টিবলয়। যে কারণে সোমবার এ দুই অঞ্চলের প্রতিটি এলাকার মানুষ কমবেশি বৃষ্টি-দর্শনের সুযোগ পেয়েছে। যদিও পরিমাণের দিক থেকে তা খুব একটা বেশি নয়। অধিদপ্তর সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদরে চার মিলিমিটার আর নোয়াখালীতে এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। তবে, দেশের সর্বোচ্চ ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের বগুড়ায়। এছাড়া, ঢাকা অঞ্চলের নিক্লি, টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহ সদর ও নেত্রকোণায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে।