ঈদের সপ্তাহজুড়ে থাকবে বৃষ্টিধারা

30

শ্রাবণের বিদায়বেলায় সাগরে লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর আপাত অবস্থানও মোটামুটি দুর্বল। এতে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে আর্দ্রতাজনিত ভ্যাপসা গরম অনুভূত হলেও পবিত্র ঈদুল আযহা কিংবা কোরবানির ঈদের দিন থেকেই ফের বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা। বিদায়ী শ্রাবণধারা কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে ঈদের পুরো সপ্তাহজুড়েই। আর সার্বিকভাবে বৃষ্টিপাতের ধরন হতে পারে হালকা থেকে মাঝারি। তবে কোথাওবা বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বর্ষণেরও আভাস রয়েছে।
আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ গতকাল শনিবার প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এই পূর্বাভাস মিলেছে। পূর্বাভাস বলছে, আগামী চব্বিশ ঘন্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, ১২ আগস্ট অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিন থেকেই দেশে সার্বিকভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা বা দু’দিনের শেষদিকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ার আলামত দেখছেন। উল্লেখ্য, আগামীকাল সোমবার দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস পূর্বদেশকে বলেন, ‘সর্বশেষ রাজস্থান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় হলেও উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা বর্তমানে দুর্বল অবস্থায় বিরাজ করছে। তবে আগামী ৪৮ ঘন্টা সময়ের শেষার্ধ্বে তা প্রবল অবস্থায় ফিরতে পারে। তার মানে, ওই সময় থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির প্রবণতা কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে।’
দেশি-বিদেশি কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঈদের সপ্তাহজুড়েই দেশ থাকবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের দখলে। তবে শ্রাবণের বিদায়ী বর্ষণধারায় থাকবে ক্ষণিক সময়ের বিরতিও। দিনের আকাশ প্রধানত মেঘলা থাকলেও ফাঁকফোকরে মেঘের আড়াল সরিয়ে উঁকি দিতে পারে সূর্যও। এক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। অন্যান্য স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে, স্থল নিম্নচাপের প্রভাব দেশের উপকূলীয় এলাকায় বিরাজমান থাকাবস্থায় সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট দেশের প্রায় সবকটি বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খানিকটা দেরিতে চেনা রূপে ধরা দেয়া চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম টানা ভারী বর্ষণের মতই নিম্নচাপের প্রভাবজনিত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতও হয়েছে যথারীতি চট্টগ্রাম বিভাগেই। এবার মৌসুমের সর্বোচ্চ দুইশ’ ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নিজের করে নেয়া কুতুবদিয়ায় গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় দিনের সর্বোচ্চ একশ’ ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ওইদিন চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায় ৮৪, সন্দ্বীপে ৫৮, সীতাকুন্ডে ৪৫, পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ৪৩ এবং সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারে ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এত বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত আর কোনও বিভাগে হয়নি। অবশ্য গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় বরিশাল বিভাগের খেপুপাড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায়। তবে, সার্বিকভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে।
এর আগে গত ১ আগস্ট আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাশেষে অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, জুলাইয়ের মত চলতি আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি বর্ষাকালীন মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে অন্তত একটি জোরদার হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সম্ভাব্য এই লঘুচাপ-নিম্নচাপগুলো দেশে ভারী বর্ষণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ফের স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
অধিদপ্তরের (বিএমডি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাধারণত সারা দেশে জুলাই মাসে গড়ে প্রায় পাঁচশ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে, এবার বিদায়ী জুলাইয়ে বৃষ্টি হয়েছে ছয়শ’ ২৫ মিলিমিটার। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। যার পরিমাণ এক হাজার ১৩ মিলিমিটার। অথচ, স্বাভাবিকভাবে গড়ে জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে সাতশ’ ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। একইভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগেও। তবে, সিলেট বিভাগ বন্যায় আক্রান্ত হলেও সেখানে গড় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। উজান থেকে নদীপথে নেমে আসা ঢলের পানিতেই মূলতঃ ওই বিভাগে মৌসুমের প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির দেখা পেয়েছেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দারাও। অথচ তার আগে গত মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) এবং জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) পর পর দুই মাসে সারাদেশে সার্বিক বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ কম। এর মধ্যে মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ দশমিক দুই এবং জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৭ দশমিক সাত শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুলাই মাসে বর্ষার মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে ৬ থেকে ১৪ জুলাই চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়। এ সময় একদিনে সর্বোচ্চ দুইশ’ ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। আর আগস্টের শুরুতে সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গত ৬ আগস্ট স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রভাব ফেলতে শুরু করে।