ঈদের বাসের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু

37

রোজার ঈদ সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা, দাম বেশি রাখার অভিযোগ আর কাক্সিক্ষত টিকেট না পাওয়ায় ক্ষোভ নিয়ে।
গতকাল শুক্রবার দেওয়া হচ্ছে ২৯ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত যাত্রার টিকেট। তবে গাবতলী, মাজার রোড, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে ২, ৩ ও ৪ জুনের টিকেটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন বাংলাদেশে ঈদ হবে। সে কারণে আগের তিন দিনের টিকেটই বেশি চাচ্ছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, প্রভাবশালীদের মন রাখতে সামনের দিকের ভালো আসনগুলো আগে থেকেই বুক করে রেখেছেন মালিকরা। আর এ জন্য তৈরি হয়েছে টিকিটের কৃত্রিম সংকট। খবর বিডিনিউজের
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিক ইকবাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় যাবেন। টিকিট কাউন্টারে এসেছিলেন ভোর সাড়ে ৩টায়। সকাল ৮টার দিকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়েছেন তিনি। তবে দাম নিয়ে তার অভিযোগ রয়েছে।
‘উল্লাপাড়ার নন এসি টিকিটের দাম তিনশ টাকা। কিন্তু আজ নেওয়া হচ্ছে ৪২০ টাকা। একইভাবে এসি বাসের টিকেট ৭০০ টাকার বদলে ১৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
তমাল হোসেন নামে একজন অভিযোগ করেন, প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া নেয় পরিবহন কোম্পানিগুলো। নওগার ভাড়া অন্য সময় ৪০০ টাকা। এখন নিচ্ছে ৫৯০ টাকা। এটা সব সময় করে।
নাবিল পরিবহনের টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে সেখানে ভিড়ও নেই। এছাড়া দেশ ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহনের ঈদের অগ্রিম টিকেটও দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে।
গাবতলীতে এসআর ও আলহামরা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এস আর পরিবহনের লঞ্চের টিকিট দেওয়া হলেও এসি বাসের অগ্রিম টিকিট দিচ্ছে না।
হাবিবুর রহমান নামের একজন ২ জুন বগুড়া যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে এসেছিলেন। বাসের সামনের দিকের টিকিট চেয়ে তিনি পেয়েছেন পেছনে দিকের আসন।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি রাত ৩টায় এখানে এসেছি। কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়েছে পেছনের সিট। তাহলে আগে এসে কী লাভ হলো!
শুভ নামে আরেকজন বলেন, টিকিটের জন্য আগে এসে বসে থাকলাম। কিন্তু এখন বলছে এসি টিকেট দেবে না। এটা আগে জানানো উচিত ছিল, তাহলে এখানে কষ্ট করে আসতাম না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এস আর পরিবহনের ব্যবস্থাপক আমিন নবী বলেন, কাউন্টার এবং অনলাইনে একই সময়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সিরিয়াল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এসি বাস কম বলে এখন টিকেট দেওয়া হচ্ছে না।
আমাদের এখানে যে সিট ফাঁকা আছে সেটাই আমরা দিচ্ছি। আর আমাদের সাতটা এসি বাসের মধ্যে তিনটা নষ্ট। ঈদের আগে এগুলো পাব কিনা নিশ্চিত না। ঈদের সময় যানজট থাকলে নন এসির যাত্রীদের অন্য গায়িতে তুলে দেওয়া যায়। কিন্তু এসি বাসের যাত্রীদের নন এসিতে দেওয়া যায় না। এজন্য এসি বাসের টিকেট বিক্রি করছি না।
আলহামরা পরিবহনের গাইবান্ধার টিকেট কিনতে এসে মাহবুব আলমও পেছনের দিকের সিট পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
‘পেছনের তিন সারির টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে জানতে চাইলে তারা বলে কল্যাণপুর থেকে সামনের টিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু আমি সেখানে ঘুরে এসেছি। সেখানে বলেছে গাবতলী কাউন্টারে দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলহামরা পরিবহনের কর্মী মোহাম্মদ মিঠু বলেন, তারা দুই কাউন্টার থেকে টিকেট দিচ্ছেন। কল্যাণপুরে দেওয়া হচ্ছে ‘এ’ থেকে ‘ই’ সিরিয়ালের টিকেট। আর এখানে দেওয়া হচ্ছে এফ থেকে জে পর্যন্ত সিরিয়ালের টিকেট।
ডেকো গ্রæপের কর্মচারী খালিদ হোসেন ভোর ৪টায় হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে এসেছেন। তবে তিনিও সামনের সারিতে টিকেট পাননি। সকাল সাড়ে ৯টায় কুড়িগ্রামের একটি টিকেট হাতে পান তিনি।
এত আগে এসেও যদি টিকেট না পাই তাহলে কেমনে হয়? ২ তারিখের মাত্র একটা টিকেট দিতে দেখেছি। আর ৩ তারিখে সামনের সারির কোনো টিকেট দিচ্ছে না। আমি পাঁচটা টিকেট চেয়েছিলাম, দিয়েছে একটা, তাও সবার শেষে।
“আমার বিশজন বন্ধুবান্ধব টিকেট কিনতে এসেছে। কেউ সামনের দিকের টিকেট পায়নি। বুঝলাম না সামনের দিকের টিকেট কোথায় গেল।”
হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে টিকেটপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। ২ জুন পঞ্চগড় যাওয়ার একটি টিকেট কিনেছেন মো. মাসুদ ইসলাম নামে একজন। তিনি জানান, পঞ্চগড়ের ভাড়া ৬৫০ টাকা।
তিন তারিখের টিকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু দিল ২ তারিখের টিকেট। তাও দাম দুইশো টাকা বেশি, সাড়ে আটশ টাকা রেখেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, সামনের দিকের টিকেট সকালেই শেষ হয়ে গেছে।
“যারা আগে এসেছে তারা সামনের দিকের টিকেট আগেই নিয়ে গেছেন। যারা পরে এসেছেন তারা পেছনের দিকের টিকেট পেয়েছেন। আর আমরা সরকারি নির্ধারিত ভাড়াই রাখছি। এক টাকাও বেশি রাখা হচ্ছে না।”
কল্যাণপুরের কয়েকটি কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে ২, ৩ এ ৪ জুনের বেশিরভাগ পরিবহনের টিকেট শেষ হয়ে গেছে। তবে ২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত বাসের টিকেট এখনও পাওয়া যাচ্ছে।
বেলা সাড়ে ১০টায় শ্যামলী এসপি পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও ২ তারিখের পরের কোনো টিকেট নেই। এরইমধ্যে উত্তরবঙ্গের সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এ কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা কামরুল ইসলাম।