ঈদেও প্রাণহীন ছিল বিনোদনকেন্দ্রগুলো

31

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঈদেও বন্ধ ছিল নগরের সব বিনোদনকেন্দ্র। প্রতিবছর ঈদে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবার করোনার ধাক্কায় তা ছিল প্রাণহীন।
গত ২৫ মে ঈদের দিন বিকেলে ঘুরে নগরের ফয়’স লেক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, স্বাধীনতা পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং জেলার পারকি সমুদ্র সৈকত, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতসহ সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ পাওয়া গেছে।
গত ১৬ মে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা না মেনে ঘরের বাইরে এসে ঈদে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। এই নির্দেশনা অমান্য করে কেউ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার একটা প্রবণতা সবার মধ্যে থাকে। সবাই বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। তাই এ বছর বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় না করে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। খবর বাংলানিউজের
‘ফয়’স লেকসহ বেসরকারি মালিকানাধীন বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন বিনোদনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। সৈকতসহ খোলা জায়গার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যাতে মানুষ যেতে না পারে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’
সরকারি নির্দেশনা না মেনে কেউ বিনোদনকেন্দ্র চালু করলে, কেউ বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় করলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
এর আগে গত ১৯ মার্চ করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সই করা ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম জেলার সব পিকনিক স্পট, বিনোদন পার্ক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
থেমে ছিলেন না সিএমপির সদস্যরা : সাধারণ মানুষ যখন আপন জনকে নিয়ে ঘরে বসে ঈদ উদযাপন করছিলেন ঠিক তখন করোনা ভাইরাসের দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যদের ঈদ কেটেছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়ে।
ঈদের দিন সকাল থেকে সকল মসজিদে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো নিশ্চিতের পাশাপাশি মুসল্লিদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, নামায শেষে সবাইকে ঘরমুখো করাসহ নানা কাজে নিয়োজিত ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১০০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, পথশিশুদের মাঝে ঈদ সালামি বিতরণ, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের খোঁজ-খবর রাখা, ডোর টু ডোর সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষের বাজার করে দেওয়া, হ্যালো ডাক্তারের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা সচল রাখা, বিনোদন পার্কে দর্শনার্থীদের জামায়েত ঠেকানো, এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যাওয়া ঠেকানো, ব্যাংক-বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ জনশুন্য মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিনা ইত্যাদি মানবিক ও পেশাগত কাজেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন সিএমপির বিভিন্ন বিভাগের পুলিশ সদস্যরা।
নগরের প্রত্যেকটি থানার অফিসার ইনচার্জরা ঈদের নামাজে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার কাজে ছিলেন ব্যস্ত। করোনা রোগী অথবা তার স্বজনরা অবাধে ঘুরাফেরার অসংখ্য অভিযোগ মুঠোফোনে পেয়ে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তারা।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, করোনায় ফোকাস থাকলেও আগের গতিতেই চলছে নিয়মিত কার্যক্রম। সকল থানায় আসামি গ্রেফতারসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধমূলক অপারেশনাল কাজ অব্যাহত ছিল।
তিনি বলেন, পর্যটন স্পট সমূহে জনসমাগম বন্ধ রাখতে নিয়োজিত ছিল বিশেষ টিম। সিটি গেইট ও মইজ্জারটেকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট ছিল নজর কাড়ার মতো।
এছাড়া স্পেশাল ব্রাঞ্চ, কাউন্টার টেরোরিজম ও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন অফিসার ফোর্স নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিলেন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত।