ঈদযাত্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ

96

করোনার ভয় উপেক্ষা করে ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফিরতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ছে। নারী-পুরুষ-শিশু সব বয়সিই শহর ছাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শত চেষ্টা করেও ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সনাক্ত হয়েছেন ৯০ জন, মারা গেছেন ৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৩০০ পেরিয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় অর্ধশত।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে কাল রবিবার বা পরদিন সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে। এবার ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। করোনা ভাইরাস ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ ছুটি বর্ধিত করে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। ছুটিতে সকল সরকারি কর্মচারীকে কর্মস্থল এলাকায় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লোকজনকে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল প্রকার গণপরিবহন। নগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারের কোন আদেশ-নির্দেশ তোয়াক্কা করছে না মানুষ। গ্রামের ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। নগরীর প্রবেশমুখ অক্সিজেন, শাহ আমানত সেতু, বহদ্দারহাট টার্মিনাল, সিটি গেট এলাকায় মানুষ আর মানুষ। ভোর ৫টা থেকেই মানুষ বাড়ি ছুটছে।
অক্সিজেন এলাকায় দেখা যায়, শত শত প্রাইভেট কার গ্রামের দিকে যাচ্ছে। অনেকে নিজে কারে গেলেও বেশিরভাগই যাচ্ছেন ভাড়া করা গাড়িতে। পুলিশ জানতে চাইলে শেখানো মতে নিজের বলেই দাবি করছে যাত্রীরা। বিপুল সংখ্যক ভাড়া করা প্রাইভেট কার গ্রামে যেতে দেখা যাচ্ছে। মাইক্রোবাসের সংখ্যাও কম নয়। ভাড়ায় যাচ্ছে এসব মাইক্রোবাস। এছাড়াও গ্রাম রেজিস্ট্রেশনের সিএনজি ট্যাক্সিও যাচ্ছে অহরহ। অক্সিজেন পার হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মিলছে ট্যাক্সি। সেখানে এক প্রকার স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখা হয়েছে। রিকশা, টমটম, টেম্পোতে করেও মানুষ বাড়ির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজানের দিকে যাচ্ছে মানুষ।
বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল প্রবেশ পথ দিয়েও অসংখ্য মানুষ যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। তাও প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করেই শহর ছাড়ছে মানুষ। বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল এলাকায় অসংখ্য মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
শাহ আমানত সেতু ও সিটি গেট এলাকা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ছে। সিটি গেট এলাকা দিয়ে শত শত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসযোগে লোকজন বাড়ি ফিরছে। পণ্যবাহি ট্রাকে করেও বাড়ি ফিরছে মানুষ। উপরে তেরপাল টাঙিয়ে ভেতরে যাচ্ছে মানুষ। শাহ আমানত সেতু এলাকা দিয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ এলাকার মানুষ বাড়িতে ছুটছে।
পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, প্রতিটি প্রবেশমুখে কড়া পুলিশ পাহারা রয়েছে। কেউ কেউ হয়তো জরুরি প্রয়োজনে যাচ্ছে। আবার অনেকে অজুহাত তৈরি করছে না-এটাও বলা যাবে না। তারপরও পুলিশ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তবে সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। মানুষেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
দেখা যায়, প্রতিটি প্রবেশ মুখ দিয়ে অসংখ্য মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছে। যে যেভাবে পারে বাড়ি যাচ্ছে। প্রবেশ মুখগুলোতে মানুষ ভিড় করছে। সুযোগ পেলেই বাড়ির দিকে ছুটছে মানুষ। সরকারের অনুমতির সুযোগ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। একেক কারে তিন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত যাচ্ছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, মানুষ যদি ঢালাওভাবে গ্রামে যায় তাহলে সংক্রমণের হার বাড়া স্বাভাবিক। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই থাকবে না। তাতে বাড়তে পারে সংক্রমণ।