ঈদযাত্রায় ভোগাবে মাতামুহুরী সেতু

81

বারবার জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করেও সচল রাখা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটি। সম্প্রতি সেতুটি ধসে যায়। এরপর প্রায় আট ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রেখে সেতুর একপাশে (এক লেন) মেরামত করা হয়। এরপর এক লেনে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও অপর লেন দিয়ে যান চলাচল করা যাচ্ছে না। সেতুটি পার হতে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। একই সময় সেতুর দু’দিকে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। এছাড়া এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, সেতুর মেরামত কাজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর দুই লেনে যান চলাচল শুরু হবে। এতে জনদুর্ভোগ থাকবে না।
জানা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে তৈরি হয় মাতামুহুরী সেতু। কয়েক বছর আগে সেতুর নিচের অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। এতে যানবাহন চলাচল ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর মেরামত কাজ করে সেতুটি রক্ষা করা হলেও এর উপর অংশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।
এরপর কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে। কিছুদিন যান চলাচল করলেও বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সময় সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কতৃপক্ষ। এজন্য সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি আবারও দেবে যায়।
অবশেষে স্থায়ী মেরামতের জন্য গত ২২ মে রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সেতুর উপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় বিকল্প পথ হিসেবে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা-ঈদমনি লালব্রিজ ও পেকুয়া চৌমুহনি হয়ে বরইতলী একতা বাজার সড়ক দিয়ে চলাচল করে দূরপাল্লাসহ সব যানবাহন। আবার কোন কোন যানবাহন পেকুয়া চৌমুহনী হয়ে বাঁশখালী সড়ক দিয়েও চলাচল করে।
ওই সময় কতৃপক্ষ হঠাৎ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করায় ঈদকে সামনে রেখে চকরিয়া পৌর শহরে কেনাকাটা করতে আসা শত শত লোকজনকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেককে কষ্ট সহ্য করে পায়ে হেঁটে ফিরতে হয়েছে স্ব-স্ব গন্তব্যে।
পরবর্তীতে সেতুর উপরের একপাশে মেরামত করে এক লেনে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। অপর লেন বন্ধ থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্ট সেতুর দু’দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ছয় লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় সরকারিভাবে। জাইকার অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু এহেছান বলেন, চকরিয়া মাতামুহুরী সেতুর বিষয়টি এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের আলাদা প্রজেক্ট ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টেটের অধীনে চলে গেছে। সুতরাং সেতুটি সচল করার ব্যাপারে এখন আর আমাদের কিছুই করার নাই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে প্রকল্পের অধীনে এ সেতুর কাজ চলছে, এখন সব দায়-দায়িত্ব তাদের উপর।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কোরাইশী বলেন, মাতামুহুরী সেতুটি আনুমানিক ৬০-৭০ বছরের পুরনো। সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কতৃপক্ষ। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি আবারও দেবে যায়। ফলে মাঝে মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজের জন্য যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে সেতুর একপাশ মেরামত করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সেতুর অপর অংশ মেরামত হয়ে গেলে সমস্যা কেটে যাবে।