ঈদগাঁহ বাজার যেন চাঁদাবাজির হাট

41

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁহ বাজারে খাস কালেকশনের নামে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। খাস কালেকশনের নামে অতিরিক্ত হাসিল আদায় নিয়ে প্রতিদিন ঘটছে হাতাহাতি, মারামারি, বাকবিতÐা। এ কর্মকাÐ বন্ধ না হলে যে কোন মুহূর্তে ব্যবসায়ী ও হাসিল আদায়কারীদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মত ঘটনার জন্ম নিতে পারে বলে আশংকা করছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে যায়, জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদগাঁহ বাজার প্রতিবছর সরকারিভাবে নিলাম হত। কয়েকবছর আগে এক ইজারাদার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ এনে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত পিটিশনটি ঝুলে রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৎকালীন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার( ভূমি কর্মকর্তা) নাজিম উদ্দীন বাজারটি নিজের আয়ত্বে নিয়ে যায়। সে সময় ঈদগাঁহ ভূমি অফিসের অধীনে বাজারের সমস্ত হাসিল উত্তোলন করতে নির্দেশ দেন।
এ নির্দেশ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে বাজারের হাসিল আদায় করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া খাস কালেকশনের নামে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেন বাজারটি। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়োগ দেন ডজন খানেক হাসিল আদায়কারী।
বাজারের ক্ষুদ্র তরকারি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, ঈদগড় থেকে তরকারি ঈদগাঁহ বাজারে এনে বিক্রি করতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। ঈদগড় রোডের নিচে রশিদ দিয়ে আমদানি নামের চাঁদা। স্টেশন থেকে বাজারে নামার পথে একদল জাপটে ধরে চাঁদার জন্য, আবার তরকারিগুলো বাজারে বিক্রি করলে দিতে হয় তৃতীয় বারের মত হাসিল। কোন পণ্য বিক্রি করলে কত টাকা হাসিল দিতে হবে তা কোথাও লেখা নাই বিধায় যেনতেন ভাবে আদায় করছে হাসিল। এভাবেই প্রায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে খাস কালেকশনের নামে চাঁদা। ফলে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের টাকা নিয়ে ঘটছে মারামারি, হাতাহাতি, বাকবিÐাসহ নানা ধরনের নির্যাতন। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে খাস কালেকশনের নামে উত্তোলনকৃত অর্থ কার পকেটে যাচ্ছে কেউ জানে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঔষধ কোম্পানির একজন এমআর বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে পদচারনা হয়েছে, ঈদগাঁহ বাজারের মত নোংরামী, ওপেন সিক্রেট চাঁদাবাজি কোথাও দেখিনি। এক কার্টুন ঔষধ ফার্মেসিতে দিতে গেলেও দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা, অথচ অন্য বাজারে ১০/২০ টাকা। প্রতিবাদ করলে নেমে আসে বহুমুখী নির্যাতন-হয়রানি।
মাছ ব্যবসায়ী ছৈয়দ আলম বলেন, জেলার বাইর থেকে মাছ এনে ঈদগাঁহ বাজারে নামানোর সময় স্টেশনে একবার চাঁদা দিতে হয়, বিক্রি করলেও দিতে হয় খাস কালেকশনের নামে হাসিল। বাজারে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি, এবারের মত বেপরোয়া হাসিল আদায় আর চোখে পড়েনি তার।
এভাবেই হয়রানির শিকার হলে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে তাদের। আবদুল গফুর নামের অপর এক ব্যবসায়ী জানান, এই প্রবণতা বন্ধ না করলে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁহ বাজারের সুনাম দিন দিন কমে যাবে। ফলে সওদাপতি, ব্যবসায়ীরা বাজারমুখি না হলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে এখানকার ৪/৫ হাজার ব্যবসায়ী। তারা অনতিবিলম্বে বাজারের হাসিল আদায়ের তালিকা করণ ও পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, খাস কালেকশনের নামে যা হচ্ছে তা বলার মত না, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগটি জানিয়েছেন। আগামী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় উপস্থাপন করা হবে বিষয়টি। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে কয়েকবার রিং দেওয়া হয় কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।ঈদগাঁহ প্রতিনিধি