ই-পাসপোর্ট চালু বুধবার মেয়াদ ১০ বছর

48

অবশেষে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দফায় দফায় পেছনোর পর আগামী বুধবার ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী থেকে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করা হবে। প্রথমেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। এ পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছর।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ই-পাসপোর্ট ভবন ও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, ২২ জানুয়ারি (বুধবার) ইলেকট্রনিকস পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, এই পাসপোর্ট বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে এবং পাসপোর্টের নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিতকরণসহ ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ হবে।
জানা যায়, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডাসহ ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু আছে। ১১৯ নম্বর দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২নং টার্মিনাল ইমিগ্রেশনে সাতটি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। এই ই-গেট দিয়ে দ্রুততম সময়ে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এনআইডি ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারের সঙ্গে ই-গেট সংযুক্ত থাকবে। সঠিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তি ছাড়া এই গেট দিয়ে পার পাওয়া অসম্ভব।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্র্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ সংযুক্ত থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
সূত্র জানায়, জার্মানি থেকে এরইমধ্যে ই-পাসপোর্টের প্রিন্ট কপি দেশে এসেছে। জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী ৩০ লাখ ই-পাসপোর্ট বই জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ওই কারখানা থেকে ই-পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকিদের বলেন, রোহিঙ্গাদের ডিজিটালাইজড আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেটি নিবন্ধন রয়েছে। কাজেই তথ্য গোপন করে কোনও রোহিঙ্গাদের ই-পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ নাই। তারপরও রোহিঙ্গারা যদি বিভিন্ন ধরনের ফাঁক-ফোকরের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট করতে যায় তাহলে বিভিন্ন প্রশ্নে তারা ধরা পড়বে।
তিনি বলেন, ই-পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে তবে বিভিন্ন ধরনের নাজেহাল এড়াতে এটি অনলাইনে করার চেষ্টা করছি যেন অতীতের তুলনায় সহজ হয়।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সর্বত্র ই-পাসপোর্ট চালু হবে। প্রতিদিন ২৫ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে।’
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, ৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছরের জন্য সাধারণ ফি (১৫ দিন) সাড়ে তিন হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) ফি পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) নয় হাজার টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছরের সাধারণ (১৫ দিন) ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২ দিন) সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য সাধারণ (১৫ দিন) সাত হাজার টাকা, জরুরি (৭ দিন) নয় হাজার টাকা এবং অতি জরুরি (২দিন) ১২ হাজার টাকা। সব ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা সাধারণ ও জরুরি পাসপোর্ট পেলেও তারা অতি জরুরি আবেদন করতে পারবেন না। সাধারণ আবেদনকারীকে ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে ১০০ মার্কিন ডলার এবং জরুরি পাসপোর্ট পেতে ১৫০ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। একই পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পেতে খরচ করতে হবে ১২৫ মার্কিন ডলার ও ১৭৫ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার এবং জরুরি ফি ২০০ মার্কিন ডলার। একই পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিককে সাধারণ ফি বাবদ ১৭৫ মার্কিন ডলার এবং জরুরি পাসপোর্ট বাবদ ২২৫ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা দিতে হবে। তবে বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি কমানো হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিক বা শিক্ষার্থীদের ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে সাধারণ আবেদনে ৩০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ক্ষেত্রে ৪৫ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদে ৫০ মার্কিন ডলার ও ৭৫ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছরের জন্য ১৫০ ডলার ও ২০০ ডলার এবং ১০ বছরের জন্য ১৭৫ ডলার এবং ২২৫ ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা। তবে সাধারণ বসবাসকারী, শ্রমিক বা শিক্ষার্থীদের এসব ফির সঙ্গে দূতাবাস প্রদত্ত সারচার্জও যুক্ত হবে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ সাংবাদিকিদের জানান, ১১তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে। শুরুতে ঢাকার কয়েকটি কার্যালয়ে দেয়া হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সব কার্যালয়েই ই-পাসপোর্ট মিলবে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক আবু সাইদ জানান, শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না। দ্রæততম সময়েরর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকেও ইস্যুর প্রক্রিয়া শুরু হবে।