ই-পাসপোর্টের যুগে চট্টগ্রাম

128

ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। আজ রবিবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মনসুরাবাদ বিভাগীয় অফিস থেকে ছয়জন আবেদনকারীর হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনের পর প্রথম ভাগ্যবান হিসেবে এই ছয়জন পেতে যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট। ঢাকার পর চট্টগ্রামেই প্রথমবারের মতো ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে।
এর আগে গত ২৩ মার্চ মনসুরাবাদ অফিসে সীমিত পরিসরে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। এক মুক্তিযোদ্ধা ও এক সাংবাদিকের আবেদন গ্রহণ শেষে করোনার কারণে সেদিনই ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা নেয়া স্থগিত করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাঈদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রথমদিনে ছয় জনের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে। প্রথমদিন উদ্বোধনের সময় যারাই আবেদন করেছিলেন তারাই পাচ্ছেন ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া চোখের মণির ছবি ও দশ আঙুলের ছাপ থাকবে। নিয়মিত ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে আবেদন গ্রহণ পুরোদমে শুরু হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে।’
জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট আবেদনকারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা জাহেদ আহমেদ, শীর্ষ একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড কমান্ডের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকীসহ তিন জন এবং গোলাম মোরশেদ কাদেরি ও রাজিব রায়হান নামের আরো দুই নাগরিকের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে। এরমধ্যে ডবলমুরিং থানাধীন পাঠানটুলি এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা জাহেদ আহামদ হচ্ছেন চট্টগ্রামে ই-পাসপোর্টের প্রথম আবেদনকারী। সে হিসেবে ই-পাসপোর্টের প্রথম সিরিয়াল নম্বর (০০০০০১) তিনিই পাচ্ছেন।
পাসপোর্ট অফিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিকভাবে প্রথম পর্যায়ে ঢাকায় উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর এখন ২য় পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগেও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রম শুরু হলেই সাধারণ মানুষ নিজেদের পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। একইভাবে এ পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বিশ্বে ১১৯তম দেশ। বর্তমানে ৬ মাসের বেশি মেয়াদ থাকা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি পাসপোর্ট যাদের আছে তাদের ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা নতুন করে আবেদনকারীদের দেওয়া হবে ই-পাসপোর্ট। তবে রি-ইস্যু কিংবা জরুরি প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট ছাড়া করোনার কারণে সকল ধরনের পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে আজ দেয়া প্রতিটি পাসপোর্টের মেয়াদ দশ বছর। দেশে এই প্রথম দশ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। অবশ্য ৫ বছর মেয়াদের ই-পাসপোর্টও রয়েছে। পৃষ্ঠাসংখ্যাও হবে দুই ধরনের। এক ধরনের বইতে ৪৮ পৃষ্ঠা, অপর ধরনের বইয়ে থাকবে ৬৪ পৃষ্ঠা।
পাসপোর্টের ফি-ও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠার ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। অপরদিকে ১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা। এই ফি’র সাথে বাড়তি ফি যোগ করে জরুরি এবং অতি জরুরি পাসপোর্ট নেয়ার সুযোগ থাকবে। তবে করোনাকালে এসব সুবিধা কার্যকর হবে না।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ই-পাসপোর্ট চালু হলেও এমআরপি প্রদান এখন বন্ধ হচ্ছে না। দুই ধরনের পাসপোর্টই চালু থাকবে। বিদ্যমান ফি দিয়ে এমআরপি পাওয়া যাবে। আবেদনকারীর আবেদনের ভিত্তিতে ই-পাসপোর্ট এবং এমআরপি প্রদানের বিষয়টি নির্ধারিত হবে।