ইয়াবা ব্যবসা কী বন্ধ হবে?

35

কক্সবাজারে ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ হয়েছে ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণ। কিন্তু শেষ হচ্ছে না আত্মসমর্পণ পরবর্তী আলোচনা। প্রতিনিয়ত চায়ের আড্ডায় ঝড় তুলছে নতুন নতুন আলোচনা।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ১০২ জন ইয়াবা কারবারীর আত্মসমর্পণে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ সম্পূর্ণ হবে? বাকী কারবারীদের কী হবে? তাদেরও কী আইনের আওতায় আনা হবে? এখানেই কী শেষ? বা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? জেল থেকে মুক্তির পর তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে কিনা? না ফিরলে কী হবে?
এমন আলোচনায় এখনো সরগরম কক্সবাজার জেলা শহর ও উখিয়া-টেকনাফ। সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচ্ছে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি, ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণ করাতে যিনি নেপথ্যে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে যাকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর বলা হয়, সেই আবদুর রহমান বদির অনুপস্থিতি। তার অনুপস্থিতি নিয়ে যেন আলোচনা থামছেই না।
কেউ বলছেন, বদির যুগ শেষ। আবার কেউ বলছেন বিতর্ক এড়াতে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। আবার অনেকের মতে, তিনি অনেক চেষ্টা তদবির করেও অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়নি। ডেকোরাম অনুযায়ী, সাবেক সাংসদের স্ত্রী, বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতারকে দাওয়াত করা হয়েছে এবং তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়াকে অধিকাংশ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। স্থানীয় জনসাধারণের মাঝেও এক ধরনের স্বস্তি ফিরেছে। এবার অন্তত ভালো কিছু হবে- এমন প্রত্যাশা করছেন তারা। তাদের মতে, বাকিদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সুযোগ দেওয়া উচিত।
তালিকাভুক্ত অনেক গডফাদার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তালিকাভুক্ত ৭৩ জন মাদকের গডফাদারের মধ্যে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৬ জন, আটক আছেন দুই জন, নিখোঁজ একজন এবং আত্মসমর্পণ করেছেন ৩০ জন। বাকিরা পলাতক।
এখনও তালিকার যারা আত্মসমর্পণ করেননি, তাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ভিআইপি-সিআইপি। এমনকি গত শনিবার আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানেও শীর্ষ ইয়াবা কারবারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শাহজান মিয়া, জাফর আহমদ, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন ও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছসহ কয়েকজনকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। আত্মসমর্পণ না করলেও তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, আত্মসমর্পণকারীদের স¤পদের কী হবে? এসব সম্পদ কী বাজেয়াপ্ত হবে নাকি সরকার নিয়ে নেবে? সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া এসব প্রশ্নের কিছু উত্তর মিললেও অনেক প্রশ্নে উত্তর মিলছে না।
এসব বিষয়ে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, আত্মসমর্পণকারীরা স¤পদের প্রকৃত হিসাব দিতে না পারলে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তাদের স¤পদ বাজেয়াপ্ত হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে অতীতে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে যেসব মামলা রয়েছে, সেসব তাদেরকেই আইনিভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, নতুনভাবে যদি কেউ আবার আত্মসমর্পণ করতে চায়, তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে আত্মসমর্পণ ও কারাগার থেকে মুক্তি মেলার পর নতুনভাবে কেউ মাদক ব্যবসায় জড়ালে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সরকার বলেন, মাদকের সাথে জড়িতদের চুল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। কেউ তদবির করলে তাকেও ছাড়া হবে না।