ইয়াবা কারবারিদের সম্পদের খোঁজে মাঠে দুদক-এনবিআর

49

ইয়াবা কারবারিদের রয়েছে অঢেল সম্পদ। এসব সম্পদ আছে নামে-বেনামে। বিলাসবহুল অট্টালিকা, দামি গাড়ি, জমি, নগদ টাকাসহ বিপুল অর্থবিত্তের মালিক তারা। তাদের এসব সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতিদমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেবে এ দুই সংস্থা। আত্মসমর্পণেও এধরনের শর্ত আরোপ করা আছে। এদিকে আত্মসমর্পণ না করা কারবারিদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার। তবে গডফাদাররা আড়ালেই থাকছেন।
জানা যায়, টেকনাফ পাইলট হাই স্কুল মাঠে গতকাল শনিবার আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। এদের মধ্যে গডফাদার রয়েছেন ২৯ জন। বাকিরা বিক্রেতা। গডফাদারদের মধ্যে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাইসহ স্বজনও রয়েছেন। আত্মসমর্পণের বাইরে রয়েছেন আরো ৪৪ গডফাদারসহ হাজারেরও বেশি কারবারি। তন্মধ্যে সাবেক সাংসদ বদিও রয়েছেন।
সূত্র জানায়, শুধু কক্সবাজার নয়, চট্টগ্রামেও রয়েছেন শতাধিক কারবারি। এদের মধ্যে গডফাদার রয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। নগরী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, নাজিরহাট, সাতকানিয়া ও পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান।
জানা গেছে, ইয়াবা গডফাদার ও কারবারিরা অঢেল সম্পদের মালিক। এদের অনেকে এক সময় রিকশাচালক বা ভ্যানচালক, মুদি দোকানদার ও দিন মজুর ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা পেশা ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসায় নাম লেখায়। তারাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
টেকনাফ অঘোষিত ইয়াবার হাট। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে মার্কেটিং করে কারবারিরা। পাচার করত চট্টগামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিটি ইয়াবা বড়ির দাম পড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা। কারবারিরা বিক্রি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। এছাড়া মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা বাকিতে ইয়াবা সরবরাহ করেন। বিক্রির পরই তারা টাকা নেন। হুন্ডির মাধ্যমেই তাদের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে টাকা পরিশোধ করতে হয় না।
এক তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন ইয়াবা সেবন করে প্রায় ৪০ লাখ লোক। টেকনাফ থেকেই এসব ইয়াবা সরবরাহ করা হয়। দিনে ১২০ কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়।
গডফাদাররা দেশের সর্বত্র ইয়াবা পাচারে জড়িত। এসব গডফাদার লাখ লাখ ইয়াবা সড়ক ও নৌ-পথে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। প্রতি রাতে ২০ লাখ ইয়াবা পাঠানোর নজিরও রয়েছে।
গডফাদারদের রয়েছে দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, একাধিক দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট-প্লট, শত শত একর জমিসহ নগদ কোটি কোটি টাকা। কক্সবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি বিদেশেও তাদের বাড়ি রয়েছে। টেকনাফের সাইফুল করিম, আনোয়ারার মোজাহের ও আইস ফ্যাক্টরি রোডের ইউসুফ কয়েকশ কোটি টাকার মালিক।
ইয়াবার মূল হোতা সাইফুল করিম এক সময় ছিলেন হতদরিদ্র। বর্তমানে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। হালিশহরে তার বাড়ি থেকে তিন লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছিল। আইস ফ্যাক্টরি রোডের মো. ইউসুফ ‘ইয়াবা রাজা’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন রেলের কুলি। বর্তমানে তিনি তিনশ কোটি টাকার মালিক বলে সিআইডি’র এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। নাজিরহাটের দেবব্রত চক্রবর্তী শত কোটি টাকার মালিক। অক্সিজেন এলাকা থেকে তিনি ৩০ হাজার ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে জামিনে আছেন।
জানা যায়, ইয়াবা কারবারিদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুদক। তাদের আয় নিয়েও তদন্ত করবে এনবিআর।
দুদকের মহাপরিচালক মো. মুনীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ সম্পদের মালিক যেই হোক রেহাই নেই। তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরও সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে। অবৈধ সম্পদ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেয়ার কোনও সুযোগ নাই।
সূত্র জানায়, টেকনাফে আত্মসমর্পণকারিদেরও বেশ কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়। এর একটি হচ্ছে অবৈধ সম্পদ। তাদের কি কি সম্পদ রয়েছে তার একটি তালিকা দুদককে দিতে হবে। দুদক অনুসন্ধান চালাবে। সম্পদের কোনও কিছুই গোপন করা যাবে না। পাশাপাশি আয়কর ফাঁকির বিষয়টি অনুসন্ধান করবে এনবিআর।
জানা যায়, আত্মসমর্পণকারি বা এর বাইরে থাকা ইয়াবা কারবারিদের সম্পদও অনুসন্ধান করবে দুদক। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবেন দুদক কর্মকর্তারা।