ইসলামের বিস্ময়কর ঘটনা-২

50

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী

হাশরের দিন দোজখ হতে মুক্তির ঘটনা :
হাশরের ময়দানে আল্লাহ পাক দু’ব্যক্তিকে নির্দেশ দিবেন, দোজখে যাওয়ার জন্য। একব্যক্তি দৌড়ে দোজখে যাবে এবং অন্যজন ধীরে ধীরে হেঁটে বারবার পিছনে ফিরে আল্লাহর রহমতের দিকে থাকাবেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত দু’জনকে ডেকে আনবেন। প্রথম ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন তুমি কেন দোজখের দিকে দৌড়ে যাচ্ছো ?
সে বলবে, হে মহান রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে সারা জীবন আপনার নির্দেশ মানতে পারিনি, ফলে আজ আমি দোজখের সাথী। পরকালে হলেও আপনার এই নির্দেশটি পালন করতে চেষ্টা করছি। এতে আল্লাহর ক্ষমাও পেতে পারি। দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে জানতে চাইবেন, তুমি দোজখে যাওয়ার সময় কেন বারবার পিছনে ফিরে দেখছিলে ?
তিনি বলবেন, হে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার চেয়ে দয়াময় ও ক্ষমাশীল আর কেউ নেই, তাই ফিরে ফিরে থাকাচ্ছিলাম আপনার ক্ষমার নির্দেশের প্রত্যাশায়। রহমানুর রহিম দয়াময় আল্লাহ পাক দু’জনকেই ক্ষমা করে দিবেন।
যে আমলে বেহেস্তের সু-সংবাদ :
মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে বসে একদিন বললেন, এখন এই দরজা দিয়ে একজন বেহেস্তে প্রবেশ করবে। এমনি সময় প্রবেশ করলেন, একজন আনসারী সাহাবী। তাঁর হাতে জুতো এবং দাড়ি থেকে ফোটা ফোটা অজুর পানি ঝরছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনও একই ঘটনা ঘটলো।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ভাবলেন, এমন কী আমলের কারণে লোকটি বেহেস্তের সু-সংবাদ পেল তা জানতে হবে। তিনি গিয়ে সে আনসারী সাহাবীর কাছে বললেন, আমি আপনার ঘরে কয়েকদিন থাকতে চাই। আনসারী সাহাবী অনুমতি প্রদান করলেন, তিন দিন তিনি তাঁর ঘরে অবস্থান করলেন। রাসুল (দ.) এর সুন্নাত তাহাজ্জুদ ছাড়া তাঁর কাছে অতিরিক্ত কোন ইবাদত দেখতে পেলেন না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তিনদিন পর সাহাবীকে বললেন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) পরপর তিনদিন আপনাকে বেহেস্তের সু-সংবাদ দিলেন অথচ আমি আপনার কাছে তেমন বিশেষ কিছু দেখতে পেলাম না। আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে তিনি বললেন, শোন আমার একটি গোপন আমলের কথা, কারো বিরুদ্ধে আমার কোন বিদ্বেষ নেই। আমার হৃদয় সকল মুসলমানের জন্য পরিষ্কার। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বললেন, বুঝতে পেরেছি এটাই আপনার বেহেস্তের সু-সংবাদের মূল কারণ।
যে কারণে অগ্নিকুÐ নিভে গেল :
ইরানের বাদশাহ জেহাকই পৃথিবীতে অগ্নিপূজার প্রচলন করে। এই বাদশাহ একদিন জঙ্গলে শিকার করতে গেলেন। তার সামনে একটি অজগর সাপ আসে। সাপটি কে তিনি একটি পাথর ছুঁড়ে মারে। পাথরটি সাপের শরীরে না লেগে আরেকটি পাথরে লেগে ঘর্ষণে অগ্নিস্ফুলিঙ্গবের হয়ে কাঠে আগুন ধরে যায়। সে আগুনে অজগর সাপটি মারা যায়। বাদশাহ জেহাক সেই আগুনের পূজা শুরু করে। এই আগুন জ্বলতে থাকে বছরের পর বছর। চলতে থাকে বংশপরস্পরায় অগ্নিপূজা। রাজ প্রাসাদেও চলতো আগুনের পূজা। জেহাকের অগ্নিকুÐটি এক হাজার বছর পর্যন্ত জ্বলছিল। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.)এর শুভ আগমনের সাথে সাথে অগ্নিকুÐটি নিভে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর এই অগ্নিকুÐটি জ্বালাতে পারেননি।
হযরত সালমান ফারসীর সত্যের সন্ধান :
হযরত সালমান ফারসী থাকতে এক খৃস্টান পাদ্রীর নিকট। পাদ্রীয় জীবনের শেষ বেলায় সালমান ফারসী (রা.) জানতে চাইলেন, আপনার মৃত্যুর পর আমি কার কাছে আশ্রয় নিব ? পাদ্রী বললো, জগতের হতে সত্য ও ন্যায় চলে যাচ্ছে, এমনি সময় শেষ নবীর আগমন হবে। তুমি তাঁর আশ্রয়ে থাকিও। সালমান (রা.) জানতে চাইলেন, আমি তাঁকে চিনব কী করে ? পাদ্রী বললেন, তিনি যাকাত গ্রহণ করবেন না হাদিয়া নিবেন এবং তাঁর কাঁধের কাছে থাকবে মোহরে নবুয়ত। যে ব্যক্তির নিকট এই তিন নিদর্শনা দেখতে পাবে তিনিই সত্য নবী। তুমি তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করিও।
অনেক বছরের দুঃখ কষ্টের পর হযরত সালমান ফারসী (রা.) মদিনায় পৌঁছলেন। তখন নবীজী মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন। সালমান ফারসী (রা.) নবীজীর দরবারে হাজির হয়ে তাঁর হাতে কিছু জিনিস দিয়ে বললেন, এগুলো সদকার বস্তু আমি আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। মহানবী সেসব বস্তু নিজে না রেখে অন্যদের দিয়ে দিলেন। এরপর সালমান (রা.) কিছ খেজুর প্রিয় নবী (দ.)এর নিকট প্রদান করে বললেন, এগুলো আপনার জন্য হাদিয়া স্বরূপ এনেছি। তিনি খেঁজুরগুলো নিজে খেলেন এবং অন্যদের খেতে দিলেন। এবার সালমান (রা.) তৃতীয় নিদর্শনটি কি ভাবে দেখবেন চিন্তিত হলে, নবী পাক (দ.) নিজেই বলে উঠলেন, দেখ তৃতীয় নিদর্শন। একথা বলেই নিজের শরীর মোবারকের জামা খুলে দেখালো। সালমান (রা.) দেখতে পেলেন মোহরে নবুয়ত। তাঁর কাছে সত্য প্রকাশিত হলো। নবীজীর কাছে গ্রহণ করলেন ইসলাম। হয়ে গেলেন রাসুল (দ.) এর সাহাবী।
একটি পুণ্যের বিনিময়ে জান্নাত :
কেয়ামতের দিন এক মুসলমান একটি মাত্র পুণ্যের অভাবে বেহেস্তে যেতে পারবে না। আল্লাহ পাক ঘোষণা করবেন, তুমি কারো কাছ হতে একটি নেকী আনতে না পারলে দোজখের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ হয়। লোকটি অস্থির হয়ে একটি পুণ্যের জন্য মা-বাবা, সন্তান, চাচা-মামা, আত্মীয় স্বজনসহ সকলের কাজে যাবেন কিন্তু কেউ তাঁকে একটি পুণ্য দান করবে না। এমন অস্থির সময় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে জানতে চাইবে আপনি এতো অস্তির কেন ? তিনি বলবেন, আমি একটি মাত্র নেকীর অভাবে জাহান্নামে যেতে হচ্ছে তাই। লোকটি বলবে তুমি চিন্তা করো না আমার কাছে মাত্র একটি পুণ্য আছে। এটি আমার তেমন কোন কাছে আসবেন না, এটি তুমি নিয়ে যাও। নেকীটি পাওয়ার পর লোকটি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে বলবে, আমাকে এক উদার লোক যার আছে মাত্র একটি পুণ্য সে তা আমাকে দান করেছে। আল্লাহ পাক বলবেন, তুমি সে, লোকটিকে ডেকে নিয়ে এসো। লোকটি আল্লাহর দরবারে হাজির হলে আল্লাহ পাক তাঁর কাছে জানতে চাইবে, আজ কেউ কাউকে কোন পুণ্য দান করে না, তুমি তোমার অর্জিত একটি মাত্র পুণ্য দান করছো ? লোকটি বলবেন, হে আল্লাহ দোজখ আমার জন্য নির্ধারিত। দোজখে যখন যেতে হবে একটি নেকী দিয়ে কী করবো ? তোমার একটি বান্দার উপকার হলে মন্দ কী ? আল্লাহ পাক রহমতের দৃষ্টিতে থাকিয়ে বলবে, তুমি উদারতার পরিচয় দিয়েছো, তাঁর সাথে তুমিও জান্নাতে চলে যাও। সোবহান আল্লাহ !

লেখক : রাজনীতিক, কলামলেখক