ইলিশ আহরণে বাধা কাটছে মধ্যরাতে

27

দেশের সমুদ্র উপকূল নদী ও নদীর মোহনায় ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণে সরকারের জারি করা টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আজ বুধবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে জেলেদের সাগরযাত্রার পথ ফের সুগম হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাল ও ট্রলার মেরামতসহ সমুদ্রযাত্রার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শেষ করেছে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে বসবাসকারী জেলেরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোমিনুল হক জানান, ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বুধবার রাত ১২ টায় শেষ হচ্ছে। এরপর দেশের জলসীমায় জেলেদের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে আর কোনও বাধা থাকবে না।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলসীমায় ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদা, লইট্ট্যা ও চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছের মজুদ রয়েছে। মাছের প্রজননের ভরা মৌসুমে এবারই প্রথম মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২০ মে থেকে টানা ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সকল প্রজাতির মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ নিয়ে মৎস্য খাতের নানা মহলে মতভিন্নতা থাকলেও সরকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে।
এদিকে, গত প্রায় এক দশক ধরেই আশ্বিনী পূর্ণিমায় মা ইলিশের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে সরকার দেশের সমুদ্র উপকূল নদী ও নদীর মোহনায় ইলিশ আহরণে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শুরুতে ১১ দিন থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২২ দিন করা হয়। এতে ইলিশের আকার, ওজন এবং আহরণের পরিমাণও বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে গত ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ সময়ে ডিম ছাড়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ। আর এই ডিম ছাড়ে মূলত মিঠা পানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে ইলিশ আহরণের পাশাপাশি পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। সরকারি হিসাবে, প্রতিবছর দেশে প্রায় দুই লাখ মেট্টিক টন হারে মাছের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে সামুদ্রিক উৎস থেকে এসেছে প্রায় ১৬ ভাগ। বিগত ২০১৭ সালে ‘ইলিশ বাংলাদেশের-বাংলাদেশ ইলিশের’-অর্থাৎ রূপালী ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব কিংবা ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করে। গতবছর ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ টনের ঘর অতিক্রম করে। চলতি মৌসুমেও ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।