ইরান-মার্কিন সংঘাত

115

নতুন ইংরেজি বছরে ২০২০ সালে শনিবার ৪ জানুয়ারির খবর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে বিদেশে মার্কিনী সদস্যদের ও সম্পদ রক্ষার্থে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইরানী জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায় ‘বিশ্বের যেখানেই আমাদের নাগরিক ও সম্পদ রয়েছে তা সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থাই যুক্তরাষ্ট্র নেবে, তাঁর অভিযোগ বাগদাতে মার্কিন দূতাবাসে হামলা ভাংচুরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। যদিও এধরনের ভাংচুরের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টের কথা জেনারেল কাসেম অস্বীকার করেছেন। তারপরও জেনারেল কাসেমকে হত্যার অনুমোদন দেয়া হয়। জেনারেল কাসেম নিহত হবার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আসার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ছবি টুইট করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
জেনারেল সোলেইমানি ছিলেন ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর বিদেশি শাখার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি কুদস ফোর্সের সর্ববিষয়ে ধর্মীয় নেতার কাছে জবাবদিহি করতেন। ৩ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে তাঁকে হত্যা করা হয়। খামেনির ভাষণ দেওয়ার ঘণ্টা কয়েক পূর্বে। ইরাকের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় সোলেইমানি নিহত হন। ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে ইরান ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়া বাহিনীর নেতৃত্বাধীন হামলা-ভাংচুরের কয়েকদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে তিনটি রকেট ছোড়া হয়। এর ১টি রকেট গিয়ে পরে মেজর জেনারেল কাসেমের গাড়িতে যেখানে মিলিশিয়া নেতা আল-মুহান্দিসও ছিলেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য ইরাকের প্যারামিলিটারি ফোর্সের সদস্যরা ছিলেন দ্বিতীয় গাড়িতে। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর ঘাঁটিতে মার্কিন হামলায় ২৫জন নিহত হয়।
৬২ বছর বয়সী সোলেইমানি ইরানী এলিট ফোর্স কুদস বাহিনীর প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির পেছনে সর্বপ্রধান ব্যক্তি। স্বীয় শহর কেরমানে তিনি জাতীয় বীর নামে খ্যাত। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামিনীর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ইরানের এই বীর পুরুষ। এই জাতীয়তাবাদী মানুষটি।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে যখন দরিদ্রতা বৃদ্ধি পায় তখন তিনি এর বিপরীতে লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক এবং সিরিয়াকে নিয়ে জোট গঠন করেন এবং তথায় মিলিশিয়া বাহিনী গঠনে বিপুল অর্থব্যয় করেন। তিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ড বাশারকে সমর্থন দেন। ইরাকে ইসলামী স্টেট গ্রæপের বিরুদ্ধে মিলিশিয়া বাহিনী পরিচালনায় সহায়তা করেন। উল্লেখিত কারণে জেনারেল কাসেম হয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্টের চক্ষুশুল। এ ব্যক্তি একজন জাতীয়তাবাদী নেতা। স্বাধীনতা এবং সার্বভৌম চিন্তা চেতনায় উজ্জীবিত। বিশ্বে জাতিয়তাবাদী নেতারা সবসময় হুমকীর মধ্যে থাকে। চিলির আলেন্দে, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুভারতের ইন্দিরাগান্ধী, পাকিস্তানের ভুট্টো, মিশরের আনোয়ার সাদাত, ইরাকের সাদ্দাম, লিবিয়ার গাদ্দাফির অস্বাভাবিবক মৃত্যুর মূলে ছিলো জাতীয়তাবাদী চেতনা। জেনারেল কাসেমের মৃত্যুও তাই। কিন্তু এ মৃত্যুতে সরাসরি নির্দেশদাতা মার্কিন মূলুকের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কাসেম সোলেইমানির হত্যা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কথা বলতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জারিভ যুক্তরাষ্ট্রে যাবার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে যোগ দেবার ব্যাপারে জাভাদ জারিভকে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়। অবশ্য ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়া ১৯৭৪ সালের চুক্তির সরাসরি লঙ্গন।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ বলতে তথায় আধিপত্য পরিধি সম্প্রসারণ করা। ইরাকে সাদ্দাম এবং লিবিয়াতে গাদ্দাফির শাসন ক্ষমতার অবসান হওয়ার মাধ্যমে মার্কিন স্বপ্ন পূরণ হয়। ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদের ধুয়া তুলে মার্কিন রাষ্ট্র আক্রমণনাত্মক ভূমিকা পালন করে ন্যাটো জোটকে নিয়ে। এখনও ইরাকে সামরিক উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য হয়। জেনারেল কাসেমকে হত্যার পর ইরাকী পার্লামেন্ট মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তারপরও ইরাকে নতুন করে সৈন্য পাঠাবার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আজকের ইরানে সংকটের মূল দায়ী এককভাবে ট্রাম্প সরকার। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে নিবৃত্ত রাখতে ছয়জাতির যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরে আসে। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা সৃজন হয় নতুন করে। অথচ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরদাতা রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স, চীন, জার্মান দেশ পাঁচটি চুক্তিটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছিল। ইরানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরো বৃদ্ধি করতে থাকে। সৌদি আরবকে সমরাস্ত্র সুসজ্জিত করতে থাকে। ফ্রান্স সাফ জানিয়ে দিয় ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তি ২০১৫ থেকে বেরিয়ে আসে তবে ১ বছরের কম সময়ে ইরান পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে। যা গোটা বিশ্বের জন্য ভীতিকর। বর্তমানে এমনিতেই আমেরিকার কাছে ৭০০০, রাশিয়ার কাছে ৮০০০০ চীনের কাছে ১৫০০০, ব্রিটেনের কাছে ১০০০, ফ্রান্সের কাছে ৫০০ ভারতের কাছে ১২০ পাকিস্তানের কাছে ১৪০ = ১৮,২৬০টি পারমাণবিক বোমা মজুদ আছে যা দিয়ে পৃথিবী নামক গ্রহে ২৭ভাগ আঘাত হানলেই যথেষ্ট। ১৯৭১ সালে ভারতের ইন্দ্রাগান্ধি যখন প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের খবর জানান দেন, তখন, পাকিস্তানের ভুট্টো সাহেব ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে ঘাস খেয়ে জীবন রক্ষা করবো তারপরও এটোম বোমা তৈরি করে ছাড়বো এবং তাই হয়েছে। ভারতে আবু কালাম আজাদ, পাকিস্তানের বিজ্ঞানী আবদুল কাদির এটোম বোমা তৈরি করে দুই রাষ্ট্রের পাল্লায় শক্তির সমতা আনেন। ইরাকের সঙ্গে ইরান আট বছর যুদ্ধের যবনিকা টেনে এটোম তৈরিতে উঠে পড়ে লাগে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানে, পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান, পারমাণবিক বোমা তৈরির তালিম দিয়েছিলেন বলে শ্রুত আছে। ২০১৫ সালে তেহরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মান, ফ্রান্স এ ছয়টি দেশকে আশ্বস্থ করেছিলো চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালিয়ে যাবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবেনা। ওবামার শাসনকালে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ট্রাম্প পচাচুক্তি ( rotten contract ) রূপে প্রকাশ করেন এবং ২০১৮তে ট্রাম্প প্রশাসন তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। নভেম্বর থেকে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রাখে। বিপরীতে ঐ চুক্তি পালনের প্রতিশ্রুত বাধ্য বাধকতা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহেরান। এতে ট্রাম্প স্বীয় দেশে সমালোচনার তোপের মুখে পড়েন। প্রথম হচ্ছে ছয়জাতির করা চুক্তি ভঙ্গ করা বা ইৎবধপয ড়ভ ঈড়হভবপঃ এর দায়ে ট্রাম্প বা েেপ্রসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই দায়ী। সরকার আসবে সরকার বদল হবে কিন্তু চুক্তির বাধ্যবাধকতাকে তো লঙ্ঘন করার কোন বিধান নেই। ঐ চুক্তি ছিলো ছয়জাতির সম্মিলিত চুক্তি। ছয় দেশের মধ্যে শুধু ১টি রাষ্ট্র ঐ চুক্তিকে পচা চুক্তি আখ্যায়িত করে বাতিল করার কোনই যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করা যায়ন, অন্য পাঁচ দেশ এক্ষেত্রে নীরব থাকাকে সম্মতির মৌন লক্ষণ বললেও অত্যুক্তি হবেনা। র‌্যাসলিং রেফারি একি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিলেন ? এরপরও ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা ট্রাম্পের বিকল্প চুক্তির পরিকল্পনা যা ‘ট্রাম্প চুক্তি’ নামে ট্রাম্প সাহেব উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের চুক্তিটি ইরানের পরমানু চুক্তির প্রতিস্থাপন হতে পারে। যুক্তরাজ্যের বরিস সাহেব বলেন, পরমাণু চুক্তিকে একদিকে রেখে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কার্যকর করতে। তবে মনে করা সঙ্গত হবে পরমাণু চুক্তিকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করলে এর খেসারত দিতে হবে সবাইকে। পক্ষান্তরে ইরানের দাবি দ্রæত তেহেরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে তেহেরান তাঁদের পাল্টা পদ ধরে অত্রসর হবে। সে পদক্ষেপ যে ক্ষয়ক্ষতির পদ তা বুঝতে বাকী থাকছেনা। ১ম বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে লীগ অবনেশন জার্মানিকদায়ী করে। ক্ষয়ক্ষতির জরিমানা বাবত জার্মান থেকে প্রতি বছর ৭ হাজার কোটি পাউন্ড দাবি করা হয়। জার্মানের সামরিক ব্যয় হ্রাস এবং সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে হিটলার বাৎসরিক ৭,০০০ কোটি পাউন্ড প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। সমরাস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করেন সৈন্য সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধিকরে। লীগ অব নেশন অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর পরবর্তীতে সংগঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি অনেকটা ট্রাম্পের অনুগামী হয়ে এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছে যার ফলে ইরানের ওপর আবারো জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা আরোপে উদ্যোগী হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, ইরানের পক্ষে অবস্থান করলেও চীন নিজেকে কোন ঝুঁকি থেকে সামলে রাখতে অব্যস্ত। ভারত-পাকিস্তানের দুটা যুদ্ধে, বাংলাদেশ-মায়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যায় চীন ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি অনুসরণ করেছে। বর্তমানে চীন বিশ্বে অর্থনৈতিক আধিপত্য অক্ষুন্ন রেখেই চলেছে। রাশিয়াকে এখন সংশোধনবাদীরূপে বদনাম করেনা। মার্কিন-তেহেরানের এ দুঃসময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানির প্রতিশ্রæতির নতুন টোপের ব্যবস্থা করেছে এর বিপরীতে চীনের ওপর কিছু কিছু শুল্ক স্থগিত রাখার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। অভিজ্ঞমহল বলছে চীনের বাড়তি আমদানি লক্ষমাত্রা বাস্তবায়িত হবার আশা অবাস্তব ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুইনয়। চীন চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান হউক এবং উভয় দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্থাপিত হউক চীনের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার হউক। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য এটাই চীনের স্বার্থ।
বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো বেশি কৃষিপণ্য আমদানি করতে সম্মত হয়েছে বেইজিং। অর্থাৎ এরাব ধহফ ঞধশব নীতি অনুসরণ করে উভয়দেশ বাণিজ্য যুদ্ধ বিরতি শুরু করতে যাচ্ছ। যার কারণে ইরান-মার্কিন ঘোলাটে পরিস্থিতিতে চীন অবশ্যই স্বীয়স্বার্থে নিজেকে কোন পক্ষ নিতে নিবৃত্ত রাখবেন। এ অবস্থায় শুধু রাশিয়াকেই তেহেরান কাছে পেতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে। চলমান পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে ড. মাহতীর মোহাম্মদের আহব্বান হচ্ছেব ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা মুসলিম বৃহত্তর স্বার্থে। তাঁর মতে ঐক্যের ব্যাপারে এটাই মোক্কম সুযোগ। বর্ষিয়ান এ নেতার মতো পাকিস্তানের পার্লামেন্টে জনৈক সাংসদ মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী হতে প্রস্তাব উত্তাপন করেন ১৯৫৪ সালে তখন যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সহোরাওয়াদী। ফ্লোর নিয়ে তিনি মন্তব্য ছুড়েন। জিরো ইনটু জিরো = জিরো, জিরো প্লাস জিরো = জিরো, জিরো মাইনাসজিরো = জিরো, জিরো ডিভাইডেট বাই জিরো = জিরো। অর্থাৎ মেধা, সামরিক সক্ষমতা অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার দিক থেকে ক্ষীণ অবস্থানে মুসলিম ঐক্য সংগঠিত হলেও কি না হলেও কি ? তবে হেঁ, সেই ১৯৫৪ এবং আজকের ২০২০ এর মধ্যে বিস্তর ফারাক। ৬৬ বৎসরে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সামরিক শক্তিমত্তা বা সক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলেও আর্থিক সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে সাথে জীবনকে উপভোগ করা জৌলুস অনেকগুণ বেড়েছে তাই তারা বাঁচতে চায় দেশের জন্য জীবন দিতে তারা চায়না। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাকামড়ি। সিরিয়াতে বহু চেষ্টার পরও ওখানে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়নি। কেবল মাত্র রাশিয়ার কারণে। রাসায়নিক অস্ত্রের ভুয়া ধুঁয়া তুলে ইরাকের সাদ্দামের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে হতবাক করে ইরাকভূমিতে পুরো আধিপত্য বিস্তার করে মালেকি তাবেদার সরকার রূপে গদিসীন করে। ওখানে সামরিক উপস্থিতি পোক্ত করেছে। ইরানকে নিয়ে মার্কিনীদের একটা পুরাতন যা বিদ্যমান, ১৯৫৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইরানের জাতিয়তাবাদী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তৎস্থলে মার্কিনীদের অনুগত পদলেহনকারী রেজা শাহ পালবিকে ইরানের মসনদে বসবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ১৯৭৯ সালে শুরুর দিকে মার্কিন একান্ত অনুগত রেজা শাহ পাহলরি ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে তৎস্থলে শিয়ামতাবলম্বী ইসলামী ধর্মীয় পক্ষের অনুসারিরা ক্ষমতা দখল করে। তারা দেশের মধ্যে স্বীয় সংস্কৃতি এবং রীতি-নীতির প্রচলন করেন। তখনকার ইরানী ধর্মীয় নেতা আয়াত উল্লাহ খোমিনী বিশ্বাস করতেন একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ঐ জাতির সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। এরপর সংগঠিত হয় ৮ বছর ব্যাপি ইরাক-ইরান যুদ্ধ। উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে যুদ্ধের যবনিকাপাত ঘটে। তারপরও জাতিয়তাবাদী সাদ্দামের কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইরাকে মার্কিন প্রভাব বিস্তার সম্ভব হয়নি। সাদ্দাম উৎখাতের পর মার্কিন মূলুক তাদের ইস্পিত মোক্কম সুযোগটা হাতের গ্রীবে চলে আসে। ইরাকে আফগান স্টাইলে কারজাই মার্কা পুতুল সরকার (মালেকি সরকার) ক্ষমতা আরোহন করে। কিন্তু ইরান মার্কিন ছোবল থেকে অক্ষত রয়ে যায়। যার আমেরিকার কাছে বদহজমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার জন্য আমেরিকা, পশ্চিমা বিশ্বে ইরানের প্রতি স্থায়ী বিদ্বেষ, ঘৃণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হতে শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য অর্থ এবং সম্পদ যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত সামরিক সক্ষমতা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্র অত্যন্ত পশ্চাতে অবস্থান। তাই চোখ রাঙানীর বিপরীতে চোখ রাঙাবার ক্ষেত্রে শুধু মানসিক মনোবল বা দেশ প্রেমের পাশাপাশি সামরিক শক্তি এবং দক্ষতা অর্জনই আবশ্যক।
আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব দ্বিমুখী স্ট্যাটেজি অনুসরণ করে। ১মতঃ যে কোন মূল্যে ইরানী রিজিম পরিবর্তন। ২য়তঃ মুসলিম বিশ্বকে দ্বিখন্ডিত বা বহুখন্ডিত করে সংঘাত উসকে দেয়া এবং সংঘাত জিঁয়ে রাখা। মাঝখানে উঁচুমূল্যে অস্ত্র বিক্রি করে অর্থসম্পদ হাতিয়ে নেওয়া। জেনারেল কাসেম হত্যার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ওপর, ইরানের ১ ঝাঁক মিসাইল হামলাতে ৮০ জন মার্কিন সৈন্যের মারা যাওয়ার খবর সত্য মিথ্যার মাপকাঠিতে বিচার না করে শুধু বলা যায়। ইরান সক্ষমতা জানান দিতে নীরবতার চাইতে একটু সরবতাকে উজ্জীবিত করতে একটু নড়েচড়ে উঠেছে। আর কি ? মোদ্দা কথা হচ্ছে মার্কিন সামরিক ক্ষমতার তুলনায় ইরানের অবস্থান অত্যন্ত নগন্য। তারপরও আমেরিকান জনগণের বৃহত্তর অংশের অবস্থান যুদ্ধের বিরুদ্ধে।
ডেমোক্রেটিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের মধ্যে প্রস্তাব পাস হয় যাতে ট্রাম্প সাহেব একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে না পারে। যেখানে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হবার আশা অত্যন্ত ক্ষীণ। তারপরও বলা যায় না কোন কারণে ইরান-মার্কিন সংঘাত শুরু হয়ে যদি বড়ো কোন যুদ্ধের দিকে মোড় নেয় তবে বিশ্ব বিরাট বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের উচিত অনাক্সক্ষাকিত কোন পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার পূর্বে সুচিন্তিত কোন পথ খুঁজে বের করা।

লেখক : কলামিস্ট