ইরানের তেল আমদানি বন্ধ করবে না ভারত

55

পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধের ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইরানের আমদানি অব্যাহত রাখবে ভারত। বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি. মুরালিধরন লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
গত নভেম্বরে ট্রাম্প প্রশাসন যখন নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়, তখন ভারতসহ আটটি দেশকে ইরান থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড়া দেওয়াা হয়েছিল। তবে চলতি বছর মে মাসে সেই অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ইরান যাতে পাকিস্তান বা চীনের দিকে বেশি না ঝোঁকে, সেটাও ভারত নিশ্চিত করতে চায়। ফলে একদিকে সস্তা তেল, চাবাহার ও ইরানের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে দিল্লিকে। ইরানের তেল কেনাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তেহরানের কাছ থেকে নয়াদিল্লির তেল আমদানি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বুধবার লোকসভার অধিবেশনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভারত কি ইরানের আমদানি বন্ধ করবে বা চালিয়ে যাবে না। জবাবে মন্ত্রী বলেন, না।সম্পূরক প্রশ্নে কংগ্রেস নেতা আন্তো অ্যান্থনি জানতে চান, এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও চাপ রয়েছে কিনা সরকারের উপর। এই প্রশ্নের জবাবে মুরালিধরন বলেন, ইরানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিজেদের স্বার্থেই এবং তৃতীয় কোনও দেশ দ্বারা এটা প্রভাবিত না।
২০১৫ সালে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য ইরানের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিশালী কয়েকটি দেশের চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তিতে, ইরান শুধু শান্তিপূর্ণ প্রকল্পে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার বদলে বিশ্ব শক্তিগুলো ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং দেশটির ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন। আগস্টের ছয় তারিখে ইরানের ওপর যেসব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তাদের বেশ কয়েকটি আগামী নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ভারত শুধুমাত্র জাতিসংঘের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞাকেই সমর্থন করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ভারতের পক্ষে সেখানকার আর্থিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্যতা পেতে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে।
ইরানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে চীন। আর ভারত তার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেতে ভারত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদে প্রতি মাসের জন্য এক কোটি ১২ লাখ ব্যারেল তেল কম কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। জুন মাসের ভারতের জ্বালানিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নভেম্বর থেকে ইরানি তেলের আমদানি বিপুলভাবে হ্রাস পেতে পারে। এমন পরিস্থিতির আঁচ করতে পেরে এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে ভারত ইরানি তেল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছিল।