পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জারি রেখে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখছে। তাদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জনসমাগম আয়োজন করার ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রবিবার পেশাওয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। ১৬ অক্টোবর থেকে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) একের পর এক বিক্ষোভ আয়োজন করেছে। দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দল থেকে শুরু করে কিছুটা বামপন্থী চিন্তাধারার দল, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যরাও এই দলের সঙ্গে যুক্ত। দেশটির চারটি রাজ্যের তিনটিতেই- পাঞ্জাব, সিন্ধ ও বালুচিস্তান- বড় ধরনের মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাইবার পাখতুনওয়ালা রাজ্যে রবিবারেই প্রথমবারের মতো সরকারবিরোধী সমাবেশ হতে যাচ্ছে।
বিরোধী দলগুলো বলছে, তারা ‘জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করা’ এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা এবং অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তুলেছে তারা। কর্তৃপক্ষের বাধা ও কিছু গ্রেফতারের মতো ঘটনার পরও এখন পর্যন্ত গুজরানওয়ালা, করাচি আর কোয়েটায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ অক্টোবর করাচিতে র্যালির পর নওয়াজ শরিফের জামাতা সফদর আওয়ানকে তার হোটেল রুম থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে সরকার এবং সেনাবাহিনী যথেষ্ট বিব্রত হয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গ্রেফতারের সময় তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে হোটেল কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন। পরে জানা গেছে, হোটেলে অভিযান চালানোর আগে সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে নিয়ে গিয়ে ‘জোরপূর্বক’ আওয়ানের গ্রেফতারি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সিন্ধ প্রদেশের সব শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা ‘বিক্ষোভ চলাকালীন ছুটি’র দরখাস্ত করে। তবে পরে দেশটির সেনাপ্রধান সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটির দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নেয়। সেনাপ্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনা এবং আইএসআই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিক্ষোভ সমাবেশের কিছু বক্তব্য সেন্সর করার জন্য মিডিয়ার ওপরও চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। র্যালি চলাকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা মহসিন দাওয়ার বা রাজনীতিতে ফিরে আসা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ লন্ডন থেকে ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ বন্ধ করে দিতো। এই নেতারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আসছেন গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পর্দার আড়ালে থেকে ইমরান খানের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার।
রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে আসছে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী আর ইমরান খানও তার নির্বাচনে বিজয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।