‘ইভিএম ভোট ডাকাতির মেশিন’

36

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালেট বাক্স ভর্তি করে, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর সিইসির মতে, নির্বাচনের আগের রাতের ব্যালেট বক্স ভর্তি বন্ধ করার একমাত্র সহজ সমাধান ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ। অথচ ইভিএম হলো আর বেশি জঘন্যভাবে ভোট ডাকাতির এক মেশিন।’
গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ডা. শাহাদাত হোসেন এ কথা বলেন। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সংসদীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যে ৬টি সংসদীয় আসনে ইভিএম দেওয়া হয়েছিলো তার মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের আমি প্রার্থী ছিলাম। ইভিএম ভোট ডাকাতির মেশিন। কেননা এসব ভোটিং মেশিনের ভোটাররা তাদের ভোট ভেরিফাই করতে পারে না। ভোটাররা তাদের ভোট ভেরিফাই করতে চাইলে ইভিএম এ অবশ্যই এ পদ্ধতি থাকতে হবে। যেটা বাংলাদেশে নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম এ নেই।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত ইভিএমগুলো হ্যাকিং প্রুফ নয়। সহজেই হ্যাক করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত আমাদের দেশের শিক্ষার হার ভালো না হওয়ার কারণে ইভিএম এ ভোট দিতে গিয়ে নির্বাচনী কেন্দ্রে নির্বচনী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেটা এবারের ইভিএম এ প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক প্রায় ২৫% থেকে ৫০% ভোট প্রদানের অতিরিক্ত সুযোগ থাকার কারণে সরকারি দল অগ্রিম ৫০% ভোট কারচুপি করার সুযোগ পেয়ে গেল। আর বাকি ৫০% ভোট জনগণের জন্য যেটা রাখা হয়েছিল সেখানে দেখা গেল বিশেষ করে আমি আমার চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের কথা বলছি, সেখানে ভোটের এক মাস আগে থেকেই আমার নির্বাচন কেন্দ্রে যেসব নেতাকর্মীরা কাজ করবে তাদের পুলিশ নিয়মিত গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা শুরু করে।’
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘৩ মাস আমাকে বিনাকারণে গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে রাখল। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না আসার জন্য পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যৌথ তান্ডব চলানো হলো। ভোটের দুইদিন আগে থেকে ভোট কেন্দ্রের এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা শুরু হলো। এমনকি ভোটের দিন আমার বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে আসা ভোটারদের গ্রেপ্তার করা হয়। যেটা এ বিগত নির্বাচনী ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এর মধ্যে সমস্ত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে যারা নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিতে গেল, দেখা গেল প্রতিটি নির্বাচনী বুথে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পূর্বঘোষিত ৩ জন সেনাবাহিনী অফিসারের পরিবর্তে ৩ থেকে ৪ জন আওয়ামী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা দাঁড়িয়েছিল। তারা জোর করে ধানের শীষে ভোট দিতে আসা ভোটারদের ইভিএম মেশিনে হাতের ছাপ নেওয়ার পরে নৌকায় ভোট দিয়ে দিল। যেসব ভোটার প্রতিবাদ করল তাদেরকে তারা অপমান করল, অনেককে মারধর করলো।’
বিবৃতিতে ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার ১৪৪ সেন্টারের ফলাফল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে প্রায় ৩ মাস পরে মুক্তি পাওয়ার পর আমি নিজে গিয়ে চট্টগ্রাম নির্বাচনী অফিস থেকে সংগ্রহ করে দেখলাম সবচেয়ে কম ভোট যে সেন্টারে আমাকে দেওয়া হল সেটা হল আমার নিজ ভোট কেন্দ্র পশ্চিম বাকলিয়া ১৭ নং ওয়ার্ডের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সেন্টার। যেখানে আমাকে মাত্র ৮টি ভোট দেখানো হল। আর আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে দেখানো হল ২৩৭৯ ভোট যদিও ১৯৯১ সাল থেকে এ সেন্টারে আমরা কখনো হারিনি। আমার পরিবারের ভোট রয়েছে প্রায় ২০টি। আমাদের ৮টি ফ্ল্যাটের ভাড়া ঘরের ভোটার রয়েছে শতাধিক এবং আমার নিজের আত্মীয়স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মী রয়েছে অসংখ্য। তাই অনেকটা কৌতুহলবশত চট্টগ্রাম নির্বচন অফিসে আবেদন করি, যে ৮ জন সম্মানিত ভোটার আমাকে ভোট দিয়েছেন উনাদের নাম এবং এনআইডি নাম্বার দেওয়ার জন্য কিন্তু দুইদিন পর নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হল ইভিএমে ভোটারদের নাম ও এনআইডি নাম্বার সংরক্ষিত রাখার কোন সিস্টেম নেই। শুধুমাত্র ভোটার সংখ্যা দেওয়া যাবে। কাজেই ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ইভিএম যে ভোট ডাকাতির মেশিন নয় নির্বাচন কমিশন সেটা কিভাবে প্রমাণ করবে?’