ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল খাবার

61

মাহে রমজানুল মোবারকের বরকতময় দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত আজ শুরু। মাগফিরাত অর্থাৎ গুনাহের ক্ষমা লাভ। দয়াময় আল্লাহ্ আপন
বান্দাদের গুনাহ হতে পুতঃপবিত্র করার লক্ষ্যে একান্ত দয়াপরবশ হয়ে মাহে রমজানুল মোবারক দান করেছেন।
আল্লাহ্ পাক যদি তার বান্দাদের কৃত অপরাধ ক্ষমা করার ইচ্ছা না করতেন, তাহলে রমজানুল মোবারকের মতো পুতঃপবিত্র মাস উপহার দিতেন না। এ পবিত্র মাসে এমন একটি মহা ফজিলত পূর্ণ রাত নিহিত যে রাতের ইবাদত সহস্র রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তাই মু’মিন মুসলমান বান্দাদের উচিৎ এ পবিত্র মাসে নিজ গুনাহরাজি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা করানোর সাধনায় রত থাকা। পবিত্র রমজান মাস পেয়েও যে বান্দা স্বীয় পাপরাশি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা করাতে পারে নি, সে নিতান্তই হতভাগা।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- ‘একদিন প্রিয়নবী (সা.) তার মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে কদম মুবারক রেখে বললেন-আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে আরোহন করেও বললেন-আমিন। আর তৃতীয় সিঁড়িতে পৌঁছেও বললেন- আমিন।
পরে সাহাবায়ে কিরাম যখন এর রহস্য জানতে চাইলেন, তখন তিনি বললেন, জিব্রাইল (আ.) এসেছিলেন, তিনি দোয়া করেছেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমজানের সুযোগ লাভ করেছে, অথচ সে তার গুনাহ মাফ করাবার সাধনা করে নি। তাই তার গুনাহ মাফ হয়নি, তখন আমি বলেছি আমিন। (হে আল্লাহ! কবুল কর) এরপর জিব্রাইল (আ.) বলেছেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যার নিকট প্রিয়নবী (সা.) এর আলোচনা হয় আর সে তার ওপর দরূদ পাঠ করে না, তখন আমি বলেছি, আমিন! এরপর যখন জিব্রাইল (আ.) বলেছেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে পায় অথচ তাদের সেবা-যত্ম ও খেদমত করে জান্নাতের ব্যবস্থা করে নেয় না, সে ধ্বংস হোক, তখন আমি বলেছি, আমিন।
উক্ত পবিত্র হাদিসের মর্মবাণী দ্বারা আমরা সহজেই ক্ষমা প্রাপ্তির উপায় সম্পর্কে অবগত হলাম। অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া রমজান মোবারকের সিয়াম সাধনা যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে সহজেই ক্ষমা লাভ করা যায়। অতএব প্রত্যেক রোজাদারের উচিৎ আল্লাহর দেয়া এ মোক্ষম সুযোগ গ্রহণ করা। তবে রোজাদারের রোজা যথাযথ আদায় হওয়ার ব্যাপারে প্রিয় নবী (সা.) একটি সর্তক বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক রোজাদার রয়েছে, যাদের রোজায় অনাহারে থাকা ব্যতীত কোনও উপকার নেই। আর অনেক লোক রয়েছে, যারা রাতে জাগ্রত থেকে নামাজে দন্ডায়মান হয়, জাগরণ ব্যাতীত তাদের কোন উপকার নেই, কেননা সারাদিন রোজা রেখে হারাম, অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ সম্পদ দ্বারা ইফতার করলে রোজা বা নামাজ দ্বারা কী উপকার হতে পারে।’ তাই রোজাসহ সকল ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার প্রধানতম পূর্বশর্ত হালাল খাদ্য, হালাল রুজি অর্জনের জন্য সকলকে চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তালাবুল হালালি ফরিদ্বাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন ওয়া মুসলিমাতিন” অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর ওপর হালাল জীবিকা অর্জন ফরজ। অপর এক হাদীস শরীফে রয়েছে যদি কোন ব্যক্তি দশ দিরহাম মূল্যের বস্ত্র ক্রয় করে এবং তার মধ্যে এক দিরহাম হারাম মিশ্রিত থাকে তবে যতদিন পর্যন্ত হারাম বস্ত্রখানী তার শরীরে থাকবে ততোদিন তার নামাজ কবুল হবে না। অতএব হালাল-হারাম এর ব্যাপারে আমাদের কে সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।