ইতিহাস বিকৃতির ঔদ্ধত্য

41

কবীর চৌধুরী তন্ময়

প্রতিটা দেশের জন্মের পটভূমি, মুক্তির সংগ্রামের গৌরবময় গল্প-কাহিনী এবং নেতা ও নেতৃত্বের সঠিক ইতিহাস শুধু অমূল্য সম্পদই নয় বরং দেশাত্মবোধে উদ্যোমী করে তোলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে। বিশ্বের একমাত্র বাংলাদেশ, যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়ে মায়ের ‘বাংলা ভাষা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, নিজের ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ভাষণগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণের মধ্যে অলিখিত স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল এবং নেতার অনপুস্থিতে কী করণীয়-দাঁড়ি, কমায় সুকৌশলে তুলে ধরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধপন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেই তিনি হত্যার বিচার কাজের পথে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’, তার সহযোগী খুনিদের পুরস্কৃত করা, তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা, ধ্বংস করা এবং সর্বোপরি পরবর্তী প্রজন্মকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে ইতিহাস বিকৃতির অপকৌশল-ষড়যন্ত্র করেছেন। যার ধারাবাহিকতা স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়াও অব্যাহত রেখেছে।
আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি”-কথাগুলো ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে মোর্শেদ হাসান খান লেখেন। তিনি একজন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক।
প্রশ্ন ওঠে, এই ধরনের শিক্ষকের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা কী শেখেন, কী ধরনের ইতিহাস তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেছেন এবং তার এই ইতিহাস বিকৃতির উদ্দেশ্য কী-এটি খতিয়ে দেখা রাষ্ট্রের জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। মিথ্যা তথ্য বা বিকৃত ইতিহাস যেমন মোর্শেদ হাসান খানের অধ্যাপনাকে বিতর্কিত করেছে, তেমনি তার দ্বারা দেশ, জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে, হবে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার শিক্ষার্থীরাও সঠিক তথ্য-উপাত্ত থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, হবেন। জিয়াউর রহমান, স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানরা এভাবেই পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরে আসছেন, মিথ্যাচার শেখানোর চেষ্টা করেছেন, করছেন। আর তাদের এই শেখানোর মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠা একটা প্রজন্ম নিজের গালে, টি-শার্টে ‘আমি রাজাকার’ বলে নিজেকে পৃথিবীর নিকৃষ্ট অপরাধী যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীর অন্তর্ভুক্ত পরিচয় দিতেও আজ লজ্জা পায় না, তাদের বিবেকবোধও কাজ করে না!
আমি ব্যক্তিগতভাবে ওইসব বিভ্রান্ত প্রজন্মকে দোষারোপ করছি না, কারণ ‘রাজাকার হচ্ছে’ ‘রাজার নীতি’, দেশে কখনো যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত হয়নি, বাংলাদেশে কোনো রাজাকার নেই বলে একটা প্রজন্মকে শেখানো হয়েছে। আবার যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজের মাধ্যমে যখন রাজাকার কী, রাজাকার বাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধে কী ধরনের অপরাধ-বর্বরতা চালিয়েছে, ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যাসহ গণহত্যার স্থির-ভিডিওচিত্র যখন সবার হাতে-হাতে পৌঁছাতে শুরু করেছে, তখন শুরু হলো আরেক ধরনের অপপ্রচার-তারা মূলত রাজাকার নয়, এই কাদের মোল্লা, সেই কাদের মোল্লা নয়! দেইল্লা রাজাকারের অপরাধ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর চাপিয়ে অপরাধী সাজানো সরকারের নীল নকশা বলে একশ্রেণির মানুষ, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও কতিপয় প্রচার-প্রকাশযন্ত্র মাঠে নেমেছিল। সেইসাথে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন ‘শাহবাগীরা নাস্তিক’ বলে বক্তব্য দিল, তখন শুরু হলো আবার ধর্মকে ব্যবহার করা, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশের সুর্য সন্তান বøগার-লেখকদের চাপাতি দিয়ে হত্যার করার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র!
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে শেখানো এক শ্রেণির বিভ্রান্ত প্রজন্মকে স্বাধীনতাবিরোধীরা নিজেদের প্রয়োজনেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদের ছবির সাথে যুক্ত করে ‘চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে’ বলে অপপ্রচার করে দেশের সহজ-সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করা, অগ্নীসংযোগসহ স্বাধীনতাকামী মানুষদের হত্যা করার বর্বর দৃশ্য পুরো দেশকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিল। আবার পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের সময়কার ছবি এডিট করে সাঈদীর মুক্তির দাবিতে স্বয়ং কাবা শরীফে মানববন্ধন হচ্ছে-এমন খবর বিতর্কিত প্রচারযন্ত্র প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে বø্যাকমেইল করে বিভ্রান্ত করার অপকৌশলগুলোও-এ জাতি কখনো ক্ষমা করবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে আজকের দিনেও এই ধরনের অপপ্রচার, ইতিহাস বিকৃতি ‘রোধ’ করার কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়েনি। মাঠে বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য আর বিষোদগার-সমালোচনা ছাড়া ‘বাস্তব উদ্যোগ’ খুব একটা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা নেই। একের পর এক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং কতিপয় বিতর্কিত গণমাধ্যম প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার পরেও কোনও শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা প্রমাণিত মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা অপরাধীদের নামের সাথে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করছে কতিপয় বিতর্কিত গণমাধ্যম! আর যে সরকারের প্রতি আশা করতে পারি সেই আওয়ামী লীগ সরকারের মাঝেও এক ধরনের নমনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। যেমন স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায়ে জানিয়েছে- ‘জিয়াউর রহমান নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক’। সেইসঙ্গে আদালত জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উপস্থাপন করে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র’-এর তৃতীয় খন্ড বাতিল ঘোষণা করেছে। এই খন্ডটি দেশ-বিদেশের সব স্থান থেকে বাজেয়াপ্ত ও প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনের বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুইজন আইনপ্রণেতা বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে তাদের বক্তৃতা শুরু করেন!
ইতিহাসে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখিত-প্রামাণাদি রয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার তাদের অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অন্তর্ভুক্ত করেন। আর মুজিবনগর সরকার এ সংবিধানের আওতায়ই পরিচালিত হয়েছে। ঐতিহাসিক দলিল ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান ও সে ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখন্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।’
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের দিকে তাকালে দেখবেন, চতুর্থ তফসিলে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালীন অস্থায়ী বিধান হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হবে। চতুর্থ তফসিলের ৩(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে এই সংবিধান-প্রবর্তনের তারিখের মধ্যে প্রণীত বা প্রণীত বলিয়া বিবেচিত সকল আইন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা যে কোনও আইন হইতে আহরিত বা আহরিত বলিয়া বিবেচিত কর্তৃত্বের অধীন অনুরূপ মেয়াদের মধ্যে প্রযুক্ত সকল ক্ষমতা বা কৃত সকল কার্য এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং তাহা আইনানুযায়ী যথার্থভাবে প্রণীত, প্রযুক্ত ও কৃত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল।” ঐতিহাসিক দলিলাদি দেখার পরেও বিএনপির সিনিয়ির-জুনিয়র নেতৃবৃন্দ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করলেও জিয়াউর রহমান কিন্তু জীবিত অবস্থায় নিজেকে কখনো এই একটি মিথ্যাচার-ইতিহাস বিকৃতির অংশীদার করেননি।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত লে. কর্নেল জিয়াউর রহমানের লেখা জাতির জনক শিরোনামের প্রবন্ধে জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কোথাও তিনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। ওই প্রবন্ধে তিনি বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক বলে আখ্যায়িত করেন। আবার ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান যখন ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সম্পর্কে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন ‘কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে আপনাদের উদ্দেশে কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল’। জিয়াউর রহমান ওই ভাষণেও নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি।
অন্যদিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে কেউ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই-বাচাই বা পর্যালোচনা করলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের পূর্বেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন-তার বিস্তারিত প্রমাণাদি পাওয়া যাবে। অথবা বিএনপির সমর্থকরা বা ইতিহাস বিকৃতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও মহল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের লেখা ‘এরা অব শেখ মুজিব’ গ্রন্থটি একটু কষ্ট করে পড়লেই বুঝতে পারার কথা যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
আবার কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের বই Revolution, Military Personnel and The War of Liberation in Bangladesh এ খোঁজে পাবেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ যা পরবর্তী সিনিয়র অফিসার হিসেবে জিয়াউর রহমান নিজেই সত্যায়িত করেছেন। সেখানে উল্লেখ আছে, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের চাকরিকালীন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে অলি আহমদ সম্পর্কে ব্রিগেড কমান্ডার মীর শওকত আলী লিখেছেন- He in fact was the first officer who took risk and on his own initiatives informed Gen. Ziaur Rahman regarding Declaration of Independence on night 25/26 March 71.’ ‘যারা এরকম ইতিহাস বিকৃতির সঙ্গে জড়িত তারা সংবিধান লংঘন করেছে। যারা বিকৃত ইতিহাস রচনা করেছেন সেই প্রত্যয়ন কমিটির বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজি ও সংবিধান লংঘনের অভিযোগে সরকার চাইলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে’ -মহামান্য হাইকোর্ট এমন নির্দেশনা দেওয়ার পরেও ওই অধ্যাপক, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বা ব্যক্তি ও কতিপয় প্রচারযন্ত্র কেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার বার বার চেষ্টা করছে, নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার কেন ষড়যন্ত্র করছে; মূলত অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না বলে। যতটুকু জানি, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন-২০১৬’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু ওই আইন নিয়ে বিস্তর আলোচনা, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে এ নিয়ে খুব একটা কাজ হয়েছে বলেও মনে হয় না। জনমত তৈরি করতে ভালো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আর অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধের আইন কবে আলোর মুখ দেখবে-এটিও স্পষ্ট নয়।
আমি মনে করি, একটি জাতি তখনই দেশাত্মবোধে উদ্ভুদ্ধ হবে যখন তার দেশের জন্মের সঠিক ইতিহাস জানবে, নেতা ও নেতৃত্বের পটভূমি নিয়ে অবগত হবে। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরে পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে ফেলা, ধ্বংস করার চেষ্টা বহুবার করা হয়েছে। এক প্রকার নিষিদ্ধই করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। পাঠ্যপুস্তকেও ইতিহাস বিকৃতি জুড়ে দিয়েছিল যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়, মন-মগজে মিথ্যাচার, বিকৃত ইতিহাস ছড়িয়ে পড়েছিল! এসে ইতিহাস বিকৃতির অব্যাহত অপচর্চা মূলত বিচারহীনতার ঔদ্ধত্য। এ উদ্ধত্য কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)