ইতালিতে থেমে গেছে গান আওয়াজ তুলেছে বেসুর ক্ষুধা

39

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ইতালিতে লক ডাউনের শুরুর দিককার দিনগুলোর কথা। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করতে পারেনি তখনও। নিজেদের বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তারা বাজাতো সংহতির সুর। ’সব ঠিক হয়ে যাবে’ সেই আশায় বুক বেঁধে একসঙ্গে তারা গাইতো গান। তবে লকডাউনের তিন সপ্তাহ পার হতে না হতেই বদলে গেছে পরিস্থিতি। দারিদ্র্য জেঁকে বসতে শুরু করেছে সেখানে। আওয়াজ তুলেছে বেসুর ক্ষুধা। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইতালির এখনকার বাস্তবতা। ওই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলছে, এখন সব গান থেমে গেছে। দেশটির কিছু অংশে, বিশেষত দক্ষিণের দরিদ্র এলাকাগুলোতে বেড়েছে সহিংসতা। মানুষ এখন উপলব্ধি করছে সবকিছু ঠিক নেই। নাপোলিস শহরের কারিতাস দিওচেসানা দি নাপোলির ধর্মযাজক সালভাতোরে মেলুসো বলেন, ‘মানুষ এখন আর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গান গায় না, নাচে না। তারা এখন আগের চেয়ে ভীত হয়ে উঠছে।
এ ভীতির কারণ ভাইরাস নয়, বরং দারিদ্র্যের ভয় তাদের মনে বাসা বেঁধেছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা ক্ষুধার্ত। ফুড ব্যাংকগুলোর সামনে এখন দীর্ঘ সারি।’ উত্তরাঞ্চলের তুলনায় ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার অনেকখানি কম। তারপরও সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ওপর করোনাজনিত মহামারির গুরুতর প্রভাব পড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা কাম্পানিয়া, কালাব্রিয়া, সিসিলি ও পুগলিয়ার মানুষ খাদ্য ও অর্থ সংকটে পড়ছে। এর মধ্য দিয়ে এসব এলাকায় তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার জন্য ছোট দোকান মালিকদের চাপ দেওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কিছু এলাকায় সুপারমার্কেটে চুরি ঠেকাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। স্বনির্ভর কিংবা চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মানুষদের উপার্জন বন্ধ রয়েছে, সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা আর কখনও চালু হবে কিনা তা অনিশ্চিত। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া এমনই একজন পারিদে ইজিনে। সিসিলির পালেরমোর একটি রেস্তোরাঁর ওয়েটার তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পারিদে বলেন, ‘অবশ্যই লকডাউনের কারণে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। আমার স্ত্রী আছে, দুই সন্তান আছে। সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কোনরকমে আপাতত আমাদের সংসার খরচ চলছে। তবে আমার জানা নেই কতদিন তা চলবে। আমি ব্যাংকে অনুরোধ করেছিলাম যেন তারা কিস্তির টাকা স্থগিত করে। তারা না বলে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি আমাদেরকে দিশেহারা করে দিচ্ছে।’
কাতানিয়ার মেয়র সালভো পোগলিয়েসে বলেন, ‘এ টাকা একবারেই পর্যাপ্ত নয়। আমরা আরও বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম। আশা করি সরকার একটা উপায় খুঁজে বের করবে। পরিস্থিতি খুব নাজুক হয়ে পড়েছে, কারণ জনসংখ্যার একটা উলে­খযোগ্য অংশ একেবারেই আয়-উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। আগে একসময় যারা সম্মানের সঙ্গে বাস করতো তারা এখন দুর্দশার মধ্যে আছে।’ আরেকটি বিষয় হলো ৪৩০ কোটি ইউরো মেয়রদেরকে মে মাসে দেওয়ার কথা ছিল। তবে সে তহবিলের বেশিরভাগ অংশ এরইমধ্যে অন্য খাতে খরচের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।