ইডেন টেস্টের পর্দা উঠছে আজ

32

কোহলি-মুমিনুলদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে কলকাতার ইডেন গার্ডেনস। আজ ফ্লাড লাইটের আলোয় এই মাঠে ক্রিকেটের নতুন ইতিহাসে পা রাখবে দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ-ভারত। ম্যাচটি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে।
ঐতিহাসিক এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে রূপ নিয়েছে পুরো কলকাতা শহর। এই মুহূর্তে কলকাতাকে ‘সিটি অব জয়’ না বলে ‘পিংক সিটি’ বলা চলে! গোলাপি আলোর আভায় সেজেছে ইডেন। ভেন্যুটির কয়েকটি স্থানে জ্বলছে গোলাপি বাতি, কোথাও করা হয়েছে গোলাপি রং। স্টেডিয়ামের স্তম্ভ ঢেকে দেওয়া হয়েছে একই রংয়ের কাপড় দিয়ে। মঞ্চ সাজাতে ভীষণ ব্যস্ত আয়োজকেরা, মাতানোর জন্য তৈরি তারকারাও। চারপাশে উৎসব মুখর পরিবেশ। একদিক থেকে বলা যায়, এটি শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়। ম্যাচটি দুই দেশের ‘গোলাপি বন্ধন’। যেটি ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের জন্যই প্রথম।
নতুন ইতিহাসে পা রাখার এই ম্যাচটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আয়োজনে কোনো কমতি রাখেননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। টেস্টের প্রথম দিন ইডেনের ক্লাব হাউস থেকে ঘণ্টা বাজিয়ে গোলাপি টেস্টের সূচনা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভিনব পদ্ধতিতে গোলাপি বল তুলে দিবে বিসিসিআই। ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেনসে আকাশ থেকে নামবে প্যারাট্রুপারদের একটি চৌকস দল। তারাই এগিয়ে এসে বল তুলে দেবে শেখ হাসিনার হাতে। একই সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি ও ভারতের সাবেক অধিনায়কদের হাতেও বল তুলে দেওয়া হবে।
এরপর ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের হাত ধরে মাঠে প্রবেশ করবেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাবেন জাতীয় সঙ্গীতে। গোলাপি বলের এই ম্যাচে সাবেক তারকাদের সঙ্গেও মঞ্চ মাতাবেন খুদে বাচ্চারা। ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবে তারা। যার জন্য গত কয়েক দিন ধরে ৪০ জন ক্যানসার আক্রান্ত বাচ্চাদের এই নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কলকাতার বারুইপুরের একটি হোম। এ ব্যাপারে ‘আনন্দঘর’ হোমের কর্ণধার কল্লোল ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো সমাজে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষকে স্পর্শ করতে অনেক মানুষই ভয় পান। ক্রিকেটের মাধ্যমে সে ভয় কাটানোর জন্য আমরা নতুন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির কাছে আবেদন করেছিলাম।’
এখানেই শেষ নয়। ম্যাচের লাঞ্চের সময়ে শচীন, গাভাস্কার, কপিল, রাহুল, অনিল সবার উপস্থিতিতে একটা টক শোর আয়োজন রেখেছে বিসিসিআই। এরপর চা-বিরতির সময় গলফ কার্টে করে সাবেক অধিনায়করা মাঠ প্রদক্ষিণ করবেন। থাকবে মিউজিক পারফরম্যান্স। মঞ্চে গান গাইবেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা। এ ছাড়া মঞ্চ মাতাবেন জিৎ গাঙ্গুলি, সৌমেন্দ্র, সৌরজিতসহ বড় বড় তারকারা।
গোলাপি বলের ম্যাচটি সাড়া ফেলবে সেটির ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এতটা যে হবে সেটা আঁচ করতে পারেননি সৌরভ নিজেও। এরই মধ্যে টেস্টের প্রথম চার দিনের টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে এমন উৎসবে রোমাঞ্চিত সৌরভ নিজেও। আয়োজনের মহড়ার কিছু আভাস দিয়ে একদিন আগে দিয়ে রাখলেন সৌরভ, ‘ম্যাচটিতে লাঞ্চের সময় শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলেদের উপস্থিতিতে একটি টক-শো আয়োজিত হবে। ম্যাচের চা-বিরতির সময় গলফ কার্টে করে সাবেক অধিনায়করা মাঠ প্রদক্ষিণ করবেন। মিউজিক পারফরম্যান্স থাকবে। দিন শেষে সবার জন্য থাকবে সংবর্ধনা ও স্মারক সম্মাননার আয়োজন। রুনা লায়লার পারফরম্যান্স, জিৎ গাঙ্গুলির পারফরম্যান্স, সৌমেন্দ্র, সৌরজিতের পারফরম্যান্স, প্রচুর ফাংশন থাকবে।’
এই টেস্টে আমন্ত্রিত অতিথির তালিকা বেশ লম্বা। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সিএবির ভারত ও বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচের সব খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেবে।
এ ছাড়া আমন্ত্রণ পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ, টেনিস সুন্দরী সানিয়া মির্জা ও লিয়েন্ডার পেজ, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পিভি সিন্ধু, অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী শুটার অভিনব বিন্দা, ছয় বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নারী বক্সার মেরি কম, ব্যাডমিন্টন কোচ গোপীচাঁদ। এঁদের প্রত্যেককেই আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। উপস্থিত থাকবেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস ল²ণ ও অনিল কুম্বলের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটরারা।
ঐতিহাসিক এই টেস্টকে রাঙিয়ে তুলতে নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করছেন বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি সৌরভ। তবে এই উৎসব মুখর পরিবেশে ক্রিকেটাররা ২২ গজ কতটা মাতাতে পারবেন সেটা সময় বলে দেবেন। তবে সভাপতি নিজেও এই প্রশ্নের উত্তরে ছিলেন নীরব। কারণ এরই মধ্যে টেস্টের প্রথম চার দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তাতে এই উৎসবকে আরো রাঙিয়ে তোলার দায়িত্ব দুই দলের ক্রিকেটারদের হাতেই ছেড়ে দিলেন সৌরভ।
যদিও অতীত ইতিহাস ও সা¤প্রতিক পারফরম্যান্স তেমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইন্দোরে সিরিজে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ১-০ তে পিছিয়ে এবার ঐতিহাসিক ম্যাচে পা রাখবে মুমিনুল হকের দল।