ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শ্রীলংকার চমক

49

গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট- আবারও প্রমাণিত হলো। ছোট লক্ষ্য দিয়েও যে জয় পাওয়া যায় সেটি করে দেখালেন শ্রীলংকা। সেমিফাইনালে আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে লংকানদের জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পরও তাদের সংগ্রহটা ছিল ২৩২। তবে লাসিথ মালিঙ্গার নিখুঁত ইয়র্কার এবং ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বোলিং ঘূর্ণিতে পরিণত হওয়া এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারাল শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করা লংকানদের দেয়া ২৩৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে লিডসের হেডিংলিতে গতকাল ২১২ রানে অলআউট হয়ে যায় এবারের বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ইংল্যান্ড। এ জয়ের ফলে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে শ্রীলংকা উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম স্থানে।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশদের ব্যাটিং স্তম্ভ জনি বেয়ারস্টোকে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডবিøউ’র ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠায় মালিঙ্গা। এরপর রুটের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়ে ১৪ রান করে সপ্তম ওভারে আবারো মালিঙ্গার বলেই প্যাভিলনের পথ দেখেন জেমস ভিন্স। তৃতীয় উইকেটে জো রুট ও অধিনায়ক ইয়ন মরগান চাপ সামলানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু তাতে কাল হয়ে দাঁড়ান ইসুরু উদানা। ১৯ তম ওভারে দলীয় ৭৩ রানে ইয়ন মরগান তাকে ফিরতি ক্যাচ দেন। এ জুটি থেকে আসে ৪৭ রান। মরগানের ব্যক্তিগত রান ২১। বিপর্যয় ঠেকাতে জো রুটের সতীর্থ হন বেন স্টোকস। কিন্তু ৩০.৩ ওভারে জোট রুটকে কুসল পেরেরার তালুবন্দি করেন মালিঙ্গা। এজুটি থেকে আসে ৫৪ রান। ১২৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে বিপদে চলমান বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা। পঞ্চম উইকেটে জস বাটলারকে পায় স্টোকস। কিন্তু তাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে দিলেন না গতকালের ম্যাচে যম হয়ে আসা মালিঙ্গাই। ৩২.৩ ওভারে দলীয় ১৪৪ রানে বাটলারকে (১০) এলবির আবেদন জানালে আম্পায়ার তাতে সায় দেন। মালিঙ্গার থলেতে জমা পড়ে চার উইকেট। এর পর শুরু হয় ধনঞ্জয়ার তান্বড।


তাঁর স্পিন ঘূর্ণিতে দলীয় ১৭০ থেকে ১৭৮ অর্থাৎ মাত্র আট রানের ব্যবধানে টপাটপ ইংলিশদের তিন উইকেট শিকার করে ম্যাচের অবস্থান নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসেন। ৪৩.৪ ওভারে জোফরা আর্চারকে যখন ইসুরু উদানা থিসেরা পেরেরার ক্যাচ বানান তখন ইংল্যান্ডের স্কোর নয় উইকেটে ১৮৬। এ অবস্থায় আর্চার ফিরে গেলেও শেষ দিকে মার্ক উডকে সঙ্গী করে ম্যাচ জয়ের একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন স্টোকস। ৪৭তম ওভারে উড প্রদীপের বলে গøাভস বন্দী হলে ম্যাচের ইতি ঘটে ২১২ রানেই। বেন স্টোকস ৮৯ বলে ৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন লাসিথ মালিঙ্গা। সাথে এদিন বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। অন্যদের মধ্যে ডি সিলভা ৩টি, উদানা দুটি এবং একটি প্রদীপ উইকেট তুলে নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা মাত্র ৩ রানে হারায় ওপেনিং দুই ব্যাটসম্যানকে। জোফরা আর্চারের আঘাতে ফিরে যান দিমুথ করুণারতেœ (১)। দুই বল পর ক্রিস ওকস প্যাভিলিয়নে ফেরান আরেক ওপেনার কুশল পেরেরাকে (২)। দুই ওপেনিং দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেন অভিষ্কা ফার্নান্ডো ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে। দলীয় রান বাড়ানোর সঙ্গে ব্যক্তিগত অর্জনে হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন অভিষ্কা। কিন্তু ৪৯ রানে মার্ক উডের শিকার হয়ে তিনি ফিরে যান। এরপরই চতুর্থ উইকেট জুটিতে ম্যাথুজ-মেন্ডিস পার্টনারশিপে বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে হাফসেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে থাকতে ব্যক্তিগত ৪৬ রানে কুশল মেন্ডিস ফিরে গেলে সেই সম্ভাবনায় লাগে বড় ধাক্কা। এই দু’জনের জুটি থেকে আসে ৭১ রান। এরপর জীবন মেন্ডিস (০) আদিল রশিদের শিকারে পরিণত হলে শ্রীলঙ্কা আরও বিপদে পড়ে। পরের সময়টায় ধনাঞ্জয় ডি সিলভা (২৯) চেষ্টা করেও বেশিদূর যেতে পারেননি। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৮তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে লড়াই চালিয়ে গেছেন ম্যাথুজ। ইংলিশ বোলাররা তাকে আউট করতে পারেননি। ১১৫ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৮৫ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি।
ইংলিশদের হয়ে ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন দুই পেসার মার্ক উড ও জোফরা আর্চার। ২ উইকেট তুলে নেন স্পিনার আদিল রশিদ। আর একটি উইকেট নিয়েছেন ক্রিস ওকস। আজকের খেলা-ভারত বনাম আফগানিস্তান (বিকাল সাড়ে তিনটা)