ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ এবং পুরোনো বছর ২০১৯ নিয়ে কথা

159

ইংরেজি ১ম বর্ষের ১ম দিনটাতে হ্যাপি নিউ ইয়ার, অর্থাৎ সুখের নতুন বৎসর এই শিরোনামে আমার নিবন্ধনটা হলে বেশ মানানসই হতো। তালেব ভাইও তা বলেছিলেন। আমার ঐদিনের লেখা ‘তারল্যের বিপর্যয়’ শিরোনামে লিখিত ছিলো। হতেপারে এলেখাটা তাঁকে বা অন্যান্য পাঠকদের ইস্পিত স্বাদ পূরণ করতে পারেনি। অর্থাৎ একটু স্বাদহীন তেতো প্রকৃতির। এমন একটা নিরস বিষয়ে (অর্থনীতি) পড়া-লেখা করলাম এ সম্পর্কে কিছু লিখলে খেজুর গাছের মতো রস নিঃসরণ না হবারই কথা। তবু মাঝে মধ্যে আত্মার ঝাল মেটাতেই অর্থনীতি বিষয়ে এক আধটু লেখি। এতে কারো হুঁশ জ্ঞানের পরিধি বাড়লে আমার প্রয়াস কিন্তু অপপ্রয়াসের উচ্ছিষ্ট পদার্থ রূপে গণ্য হবেনা। বয়সতো কম হয়নি। দেখতে দেখতে এ তাগুলো বছর কিভাবে পেরিয়ে আজো আল্লাহর কৃপাতে জীবিত মানুষরূপে শ্বাসপ্রশ্বাস আগমন নির্গমন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সচল আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রিয়াকলাপের ডিস অর্ডার হলেও উপায় নেই গোলাম হোসেন। উপলব্ধি করি, মগজে সুক্ষ্ণ তারগুলোর কিছু কিছু ছিড়ে গেছে। চোখের চশমা চোখে রেখে ঘরময় খোঁজাখুঁজি করতে করতে যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন গিন্নী একটু দূরে অবস্থান করে পিকনিক করে হাসে। এ অবাঞ্চিত অবস্থা দর্শনে জীবন সঙ্গিণীর প্রতি ঘৃণ্ণার মাত্রাটা আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি ঘটে। আমার দুর্বল জায়গায় হিট করে মন্তব্য ছুড়েন দ্যাখো তোমার চশমা কিঞ্চিৎ স্থান পরিবর্তন করে কোপালে অবস্থানরত আছে। এ ধরনে উদ্ভট পরিস্থিতিকে ‘ভাঙ্গা ঢুলার মরামাছ রূপে বিশেষণ যুক্ত করলে বেশ মানানসই হতো। কখন বছরের সমাপ্তি হয় তখন নতুন বছরের আবির্ভাব হয় এ বয়সে তা তেমন বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ জীবনে রঙ্গীন কিছু দর্শন করে চিত্তকে রাঙ্গায়িত করার সময় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন মরা গাঙ্গে জোয়ার আসলেও কি না আসলেও কি ? সেই ১৯৭৮ সাল সেই ৩১ ডিসেম্বরের সেই রাত ১২টায় আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। কনকনে শীতের ঠাণ্ডায় অবস্থান নিয়েছিলাম ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে শিক্ষাসফর করতে যাচ্ছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন তারুণ্যের শক্তি সমর্থে পরিপুষ্ট। ১২.০১ মিঃ নতুন বছরকে আনন্দের উম্মাদনায় বরণ করে নিয়েছিলাম। এখন বার্ধক্য, তারুণ্যের ত্যাগদিপ্ততা নেই। এখন চোখ নিদ্রাচ্ছন্ন। শীতে মোটা কম্বল জুড়িয়ে খাটে অবস্থান করেছিলাম। ১২টা ১মি টাস টুস পাটকার শব্দে মেয়েকে ডেকে বন্ধুদের নাম বললাম তাদেরকে নতুন ইংরেজি বর্ষের শুভেচ্ছা বাক্যের ম্যাসেজ দিয়ে দিতে বললাম এবং তাই পালিত হয়। টুয়ান্টি টুয়ান্টি’র প্রথম দিনটা এভাবে সূচিত হয়। আমাদের দেশে বর্ষবরণ তিনটা। বাংলার পহেলা বৈশাখ, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পহেলা মহররম, ইংরেজি বর্ষবরণ পহেলা জানুয়ারি। ১০১০ সাল, ২০২০ সাল ৩০৩০ সাল এধরনের দুই অংকের মিলযুক্ত সালের আবির্ভাব হয় প্রতিহাজার বছর অন্তর অন্তর। অর্থাৎ আমাদের মতো সৌভাগ্যবান প্রজন্ম ১০০০ বছর পর ৩০৩০ সাল। ২০২০ সালের ১ম মাসের ১ম তারিখে আমার উক্তিকে নিয়ে কেউ আমাকে স্মরণ রাখবে কিনা জানা নেই। তবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে এবং ভয়াবহ ডিজিট্যাল মারণাস্ত্র তৈরির মাধ্যমে যুদ্ধ বিগ্রহ যদি সংঘঠিত হয় পৃথিবী নামক গ্রহের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমেরিকায় ৭০০০ হাজার রাশিয়াতে ৮০০০ হাজার চীনে ১৫০০ বৃটেনে ৫০+ পাকিস্তানে ১৪০ এবং ভারতে ১২০টি পারমাণবিক বোমা দিয়ে পৃথিবী নামক গ্রহে ২৭ বার আঘাত করা যাবে। সেজন্য লিখেছি ৩০৩০ সাল পর্যন্ত যারা বেঁচে থাকবে তারাই সৌভাগ্যবান। কি জানি কেয়ামতের ভয়াবহতার জন্য মানুষ কি নিজেরাই প্রযুক্তি নিচ্ছে ? প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির ভ্যালেন্সশিটের মাধ্যমে কালের চক্র আবর্তনের মাধ্যমে মহাকালের গর্তে হারিয়ে গেলো ২০১৯ সালটি। ২০১৯ সালের না পাওয়ার ব্যথাভরা ব্যর্থতা এবং প্রাপ্তির আনন্দ এ দুইয়ের ব্যবধান আছে অস্বীকার করার পথ নেই। ব্যালেন্স শিটের দুটো দিক যখন অমিল হয়ে পড়ে ঐ অমিলটার মিলবন্ধন করতে Suspension account বা অনিশ্চিত হিসাবের অংকের যুক্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত হিসাবের পরিসমাপ্তির জের টানবার বিধান আছে। পূর্বতন বছরের প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তিতে যথেষ্ট ফারাক বিদ্যমান থাকলেও ৩নং ছাগলছানার মতো ৩১শে ডিসেম্বর না পাওয়ার পরও তিড়িং বিড়িং নৃত্য ও উম্মাদনার ও বেহায়াপনাকে ঠ্যাশ দেবার প্রয়াস বোধহয় ছিলো তাই বিদায়ী বর্ষে অপ্রীতিকর কোন খবর না আসায় এটা সুখবার্তা।
নতুন বছরের অভ্যুদয় বলতে পুরাতনকে ঝেঁটিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে নতুন কিছু সৃজন করার উদ্যোগ কেবল নয়। Past is Past অর্থাৎ অতীত, অতীতেই But it is important for Present and future reference কিন্তু এটা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত। অতীতের ব্যর্থতার হেতুকে অবলোকন করে শুদ্ধতা অর্জনের পথে এগুলো হবে। তাই সমস্ত গ্লানিকে সম্মুখে রেখে আত্মশুদ্ধিতে সমৃদ্ধ হয়ে অর্জনের দৃঢ় প্রত্যাশার রাস্তা হাঁটতে হবে প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলার মাধ্যমে। যা আমাদের করণীয়, যা আমরা করিনি, যা হওয়া বাঞ্জনীয় তা হয়নি। এসমস্ত কিছু বাচবিচারের অঙ্গিকার এবং বাস্তবায়নের জন্য ত্যাজদীপ্ত শপথের আহবান থাকলো ইংরেজি নতুন বর্ষে। সমালোচনাকে নিরুৎসাহিত করে নয়, সমালোচনাকে আত্মশুদ্ধির উপকরণ হিসেবে নিয়ে শুদ্ধ চলার পথ আবিষ্কার করতে হবে। সব পক্ষের মানুষগুলোই আন্তরিকভাবে পক্ষের নয় আর সব প্রতিপক্ষের মানুষগুলো আজীবনের শত্রু নয়, অজ্ঞানী বন্ধুর চাইতে জ্ঞানী শত্রু উত্তম। প্রশংসায় যারা সার্বক্ষণিক পঞ্চমুখ। এসব চামচা প্রকৃতিদের থেকে সদা সতর্কতা আবশ্যক। পাপীদের মধ্যে জ্ঞানপাপীরা সবচাইতে বড়ো পাপী। সবচাইতে বড়ো পাপ মিথ্যাচর্চা করা সত্যকে আড়ালে অবেডালে রাখা। অহংকার হিংসা জঘন্য কাজ। মহত্ত¡তা অর্জনের জন্য সত্য অর্জনের সাধনা করা। সৎজীবন যাপনে একটা আলাদা সন্তুষ্টি আছে সত্য চর্চাতে সুখ আছে। যারা সৎজীবন যাপনে অভ্যস্ত তাদের চিত্তে কঠিন শক্তি আছে। নতুন বছরে এসব লোকদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। যারা দেশকে ভালোবাসেনি দেশের স্বার্থকে ক্ষুন্ন ও ক্ষীন করেছে, যারা হত্যা রাহাজানি, ধর্ষণ, ভূমিদস্যুতা করেছে নীতিজ্ঞান জলাঞ্জলী দিয়ে সম্পদ হরণ করেছে, রাষ্ট্রের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করেছে তাদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করছি। পহেলা জানুয়ারি ২০২০ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(JSC) পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। সাফল্যের হাস্যোজ্জ্বল চেহেরা আমার হৃদয়ে আনন্দের সুবাতাস আন্দোলিত করেছে। পাসের হার আমার মায়েরা এগিয়ে আছে। মেয়েদের পাসের হার ৮৩.৫০ শতাংশ পক্ষান্তরে ছাত্রদের পাসের হার ৮২.৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ ০.৭১ শতাংশ বেশি। মোটামুটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এক্কেবারে মনের মতো প্রতিযোগিতা। নতুন বছর এদের সবার জন্য সুখবার্তা বয়ে আনুক এপ্রত্যাশা এবং তারা আশীর্বাদে আগামী দিনগুলোতে বিদ্যাবুদ্ধিতে উত্তর উত্তর পরিপুষ্ট হোক চলার পথ হোক অনুকরণীয়।
পিইসিতে কমেছে জিপিএ-৫ ও পাসের হার। গতবছর জিপিএ-৫ ছিলো ১৮১৮৪ জন এ বছর ১৬৫৩২ জন পাসের হার গত বছর ৯৫.৮৭ শতাংশ চলতি বছরে ৯৫.২০ শতাংশ অর্থাৎ ০.৬৭% কমেছে। তারপর এসব শিশু-কিশোরদের জন্য প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
গত বছরের ঘটনার মধ্যে নুসরাত হত্যাকাণ্ড, তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ (৩৩) এর আত্মহত্যা, রিফাত হত্যাকাÐ আবরার হত্যাকাণ্ড মনকে আঘাত করার মতো। বছরের প্রান্তসীমায় ২৮ ডিসেম্বর মোটর সাইকেল আরোহী তরুণ প্রকৌশলী ইমদাদুল হাসানের কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে অপমৃত্যু হওয়া, কর্ণফুলীতে বাংলাবাজার নৌঘাঁটিতে জাহাজের ধাক্কায় নদীতে পড়ে গিয়ে নুর মোহাম্মদ মাঝির মৃত্যু সংবাদ এবং সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ সীতাকুণ্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক সাইফুজ্জামান তাঁর ২ কন্যাসহ ‘মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার খবর অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। এদের সবার জন্য সমবেদনা।
বিদায়ী বছরে যাদের হারিয়েছি তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব জয়নুল আবেদীন ১৭ ডিসেম্বরে প্রয়াত হন। ৩ জানুয়ারি ২০১৯ অত্যন্ত রুচিশীল রাজনীতিক আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেবের মৃত্যু, চট্টগ্রাম কালুরঘাট নতুন সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা বর্ষিয়ান রাজনীতিক ৬৭ বছর বয়সে সেতু তৈরির পূর্বেই প্রয়াত হন। জাতিয় পার্টির হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের জীবনাবসান ঘটে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। কিন্তু একথা সত্য জন্মিলে মরতে হবে।
মৃত্যু অনিবার্য। যারা অতীত জীবনে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ত্যাগের মনোভাব নিয়ে সেবা করে গেছেন তাদের কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করার জন্য রাজনীতিকদের প্রতি অনুরোধ থাকলো। দেশের স্বার্থ আগ্নেস্থান পাক নতুন বছরে। প্রতিটি মুহূর্তে দেশপ্রেম পরিপুষ্ট হোক প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক : কলামিস্ট