আসলাম চৌধুরীর ‘অপেক্ষায়’ উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি

53

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ন্যায় আহব্বায়ক কমিটি পাচ্ছে উত্তর জেলাও। যে কোনো সময় এ কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। কমিটি গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হলেও আহব্বায়ক নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে কেন্দ্র। তৃণমূলের সমর্থনে কেন্দ্র চায় আসলাম চৌধুরীকেই আহব্বায়ক করতে। তাই কারাগারে থাকা আসলাম চৌধুরী জামিনে বের হওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণছে কেন্দ্র। তবে বিকল্প হিসাবেও কয়েকজনকে রাখা হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে উত্তর জেলা বিএনপির এ আহব্বায়ক কমিটি ঘোষিত হতে পারে।
মোসাদ কানেকশনের দায় নিয়ে কারাগারে যাওয়া আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বর্তমানে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। একটি বাদে বাকি সবগুলো মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। এই মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি মিলবে তার। তাই চলতি মাসেই তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা। যে কারণে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা। তাছাড়া আহব্বায়ক বা সদস্যসচিব হলে পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তারা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না, এমন কড়া নির্দেশ আছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। একই সাথে আহব্বায়ক কমিটিকে নব্বই দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে সম্মেলন করার নির্দেশও দেয়া হচ্ছে। যার কারণে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন নেতারা আহব্বায়ক কমিটিতে আসতে নারাজি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, উত্তর জেলায় নতুন কমিটি করার চিন্তাভাবনা চলছে। আলোচনা হচ্ছে কমিটি নিয়ে। সহসা কমিটি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কে কি হচ্ছেন সেটা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনাই হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা মাঠে আছেন তাদের সমন্বয়ে কিভাবে কমিটি করা হবে সেটার আলোচনা হয়েছে। নগরের কাউকে বা জেলার কাউকে আহব্বায়ক করার কথাটি সত্য নয়। আমরা সবাইকে সমন্বয় করে কমিটি করার চেষ্টা করছি। এ মাসেই কমিটি ঘোষণা হবে এটা বলতে পারছি না। তবে যে কোনো সময় কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।
২০১৪ সালে গঠিত আহব্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে উত্তর জেলায়। ইতোমধ্যে কমিটির আহব্বায়ক দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। মারা গেছেন সদস্যসচিব। দুই কান্ডারি ছাড়া উত্তর জেলা বিএনপির এ কমিটির সাংগঠনিক তৎপরতা অনেকটা ঢিমেতালে অবস্থা। দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে কখনো কখনো মুখোমুখীও অবস্থান নেন। দুই ধারার চাপে পড়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। অনেকে ইতোমধ্যে নিস্ক্রিয়তার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এরই মধ্যে সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নজরদারিতেই হচ্ছে এ কমিটি। কোন্দল নিরসনের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপও। তাছাড়া কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় পালনের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যানের কড়া নির্দেশ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি সূত্র মতে, দক্ষিণ জেলার আগেই উত্তর জেলা কমিটি গঠন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু উত্তরের কোন্দল নিরসন হয় এমন কোন যোগ্য নেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যাকেই কমিটির আহব্বায়ক করা হোক না কেন মাঠ পর্যায়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আসলাম চৌধুরীকেই বিরোধ নিরসনের একমাত্র নিরাময়ক হিসাবে দেখা হচ্ছে। তবে আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকেই জেলে আছেন। বর্তমানে অর্ধশতাধিক মামলার আসামি হয়ে থাকলেও একটি ছাড়া বাকি সবগুলোতে জামিনে আছেন তিনি। ফলে যে কোনো সময় কারাগার থেকে জামিনে বের হতে পারেন তিনি। আর আসলাম চৌধুরীর ফিরে আসার অপেক্ষায় আটকে আছে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি। বিকল্প হিসাবে গোলাম আকবর খোন্দকার, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, কর্নেল আজিমুল্লাহ বাহার ও ভিপি নাজিমের নাম প্রস্তাবনায় আছে। এদের মধ্যে গোলাম আকবর খোন্দকার ও আজিমুল্লাহ বাহার আহব্বায়ক হতে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটাই দেখার বিষয়।
কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। কাকে আহব্বায়ক করা হবে সেটা নিয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ আছে, আহব্বায়ক-সদস্যসচিব সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আবার বিরোধ যাতে না হয় সে দিকটাও চিন্তা করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে যাচ্ছে। যদি এরমধ্যে আসলাম চৌধুরী বের হন, তখন পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। না হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে আহব্বায়ক এবং কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্যসচিব করে উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে এ কমিটির আকার বাড়িয়ে ৯৩ সদস্যের করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে জেলার প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করতে বলা হয়। আর এ কমিটি করতে গিয়েই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন আহব্বায়ক ও সদস্যসচিব। সেই দ্ব›েদ্বর কারণে থানা পর্যায়ে আহব্বায়ক ও সদস্যসচিবের অনুগত দুটি করে কমিটি হয়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আসলাম চৌধুরী। এরই মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অর্ধশতাধিক মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি। অন্যদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মারা যান আবদুল্লাহ আল হাসান। আহব্বায়ক ও সদস্যসচিবের পরে এ কমিটিতে যুগ্ম আহব্বায়ক বা যুগ্মসচিবের কোনো পদ ছিলো না, বাকি সবাই ছিলেন সদস্য। ফলে নেতৃত্বের ভার কারো উপর পড়েনি। আহব্বায়ক ও সদস্যসচিবের অনুগতরা আলাদাভাবে দায়সারাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন।