আসন বরাদ্দের দাবিতে ফের আন্দোলনে ছাত্রীরা

36

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হলে আসন বরাদ্দের দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছেন হলটিতে সংযুক্তিপ্রাপ্ত ছাত্রীরা। চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নামে নির্মিত আবাসিক হলটির উদ্বোধন করলেও এখনো ঠাঁই হয়নি শিক্ষার্থীদের। ফলে আসন বরাদ্দের দাবিতে গত ছয় মাসে তিন দফা আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রীরা।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে আবাসিক হলটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আবাসিক হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দীনসহ আবাসিক শিক্ষকদের অবরুদ্ধে করে রাখেন তারা। আজ সোমবারের মধ্যে আসন বরাদ্দের মৌখিক সাক্ষাৎকারের ফল প্রকাশ এবং ২০ অক্টোবরের মধ্যে আসন বরাদ্দের কার্যক্রম সম্পন্নের দাবি জানানো হয়।
বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে আসন বরাদ্দের তারিখ ঘোষণা করলে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আবাসিক হলটি উদ্বোধন করেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আরো দুই হলের সম্প্রসারণের কাজ হয়। এই হলের শিক্ষার্থীদের সংযুক্তি দিয়ে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে আবাসিক হলটির শিক্ষার্থীদের কোন আসন বরাদ্দ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবাসন সংকটে থাকা শিক্ষার্থীরা বারবার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীনের কাছে দাবি জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন।
পরে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সমন্বিত নবীন বরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী দ্রুত সময়ের মধ্যে আসন বরাদ্দের ঘোষণা দেন। এরপরও শিক্ষার্থীরা সরাসরি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে অনুষ্ঠানের পাশেই অবস্থান নেন। অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ওইসময় উপাচার্য নিজেই শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের সাক্ষাৎকার তারিখ ঘোষণা এবং হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপর দুই দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলের সঙ্গে এই হলটির সাক্ষাৎকারের তারিখও পেছানো হয়। এরই মধ্যে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) দায়িত্ব গ্রহণের পর সকল আবাসিক হলের প্রভোস্ট, অনুষদের ডিনদের নিয়ে এক সভায় আসন বরাদ্দের সাক্ষাৎকারের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণে সাক্ষাৎকার স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ১১ জুলাই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর আসন বরাদ্দের মৌখিক সাক্ষাৎকার নেওয়া হলেও এখনও বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাই ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে আবাসিক হলটির প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের ভেতরে রেখে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কর্তৃপক্ষ মৌখিক আশ্বাস দিলেও লিখিত বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসতে রাজী হননি শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে শিক্ষার্থীরা চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবাসিক হলটির আসন বরাদ্দের সাক্ষাৎকারের চূড়ান্ত তালিকা আগামী ২৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করা সম্ভব না হলে ৩ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে। আর ৪ থেকে ১২ নভেম্বর আসন বরাদ্দ ফি, ভর্তি ফি-সহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আবাসিক হলটির সংযুক্তিপ্রাপ্ত পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আশরাফী নিতু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, গত ছয় মাসে আন্দোলন করেও আমরা আবাসিক হলে উঠতে পারিনি। এজন্য আমরা আজ মৌখিক সাক্ষাৎকারে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ ও আসন বরাদ্দের তারিখ ঘোষণার দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমাদের মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এর আগেও একাধিক বার মৌখিক আশ্বাসে কাজ না হওয়ায় আমরা লিখিত বিজ্ঞপ্তির দাবিতে অনড় ছিলাম। পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় লিখিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি। বিজ্ঞপ্তি বাস্তবায়ন না হলে কোন কিছু বিবেচনা ছাড়া আমরা আবার আন্দোলনে যাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর মৌখিক সাক্ষাৎকারের ফল প্রকাশের চেষ্টা করবো। সামনে যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা, তাই কোন কারণে সম্ভব না হলে আমরা ৩ নভেম্বর আরেকটি তারিখ দিয়েছি? অবশ্যই ওই তারিখে ফল প্রকাশ করে ১২ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলে তুলে দেওয়া হবে।