আষাঢ়ের প্রথম দিনেই পানিতে টলমল নগরী

57

গ্রীষ্ম বিদায় নিয়ে গতকাল শনিবার মেঘলা আকাশ দিয়েই যাত্রা শুরু করে বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়। জ্যৈষ্ঠ মাসের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে দাবদাহটাও কমে যায়। শনিবার সকাল থেকে সূর্যের তেজ না থাকলেও দুপুর থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত। দুপুর দেড়টার পরে প্রায় এক ঘণ্টা চলে ভারী বৃষ্টিপাত। এতে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করেছে বাসাবাড়ি-দোকানেও। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী ।
বৃষ্টিতেই নগরীর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, ওয়ারল্যাস গেট এলাকায় রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়। হাঁটু থেকে কোমর পানি মাড়িয়ে পথ চলতে হয়েছে নগরীর প্রবর্তক মোড়, শুলকবহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা, খাতুনগঞ্জ, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, পশ্চিম বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
এদিকে পাশাপাশি আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও পনি জমে যায়। পানিতে এলাকায় খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ রুট গণপরিবহন শূন্য হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
সিডিএর চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আগে যে রকম জলাবদ্ধতা হতো এখন তা কিছুটা কমেছে। আগে সড়কে ৪/৫ ঘণ্টা পানি জমে থাকতো এখন ঘণ্টা-দুয়েকের মধ্যে সরে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী কাজ করাতে কিছুটা সুফল আসছে। পুরো সুফল পেতে হলে কাজ শেষ করতে হবে। এখনো কাজ সবেমাত্র শুরু। কনসালটেন্ট প্রকল্পের ডায়াগ্রাম দিতে প্রায় একবছর দেরি করেছে। যেসব এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা হয় সেনাবাহিনী সেসব এলাকায় আগে কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে সুফল পাওয়া যাবে।
গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টা থেকে মূলত ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। স্থায়ীত্ব ছিলো প্রায় একঘণ্টা। এরমধ্যে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নগরীর নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকা অবস্থায় অল্প বৃষ্টিতেই দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ জানান, বিকেল তিনটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টা আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। এছাড়া মাঝারি আকারে বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে।
এদিকে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য মেগা প্রকল্পের কাজে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ’র সমন্বয়হীনতা, প্রকল্পের কাজের ধীরগতি এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখাকে দায়ী করছেন ভোক্তভোগীরা।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নুরুল কবির বলেন, পরিকল্পিত কাজ না করে যেমন খুশি তেমন কাজ করলে কোনো সুফল আসবে না। সিডিএ আবাসিক এলাকার কয়েকটি সড়ক উঁচু করা হয়েছে। জোয়ারের পানি থেকে এলাকার লোকজন অনেকটা নিস্তার পেয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই বর্ষায় আরো কত দুর্ভোগ আছে সেটা দেখার বিষয়।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এখনো মাত্র শুরু, বুঝা যাচ্ছে এবার ভাল বৃষ্টিপাত হবে। সামনে বৃষ্টিপাতে কতটুকু পানি হয় সেটাই চিন্তা করছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে। জামালখানের কোথাও পানি জমেনি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ছোট নালাগুলোর ময়লা অপসারণ করা হয়েছে। বড় নালাগুলো জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় পরিষ্কার করা হবে।
তিনি বলেন, শুধু নালা বা খাল পরিষ্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না। এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করলে হবে না। আমাদের অনেকগুলো সমস্যা। পরিকল্পিতভাবে এসব সমস্যা যতদিন সমাধান করা যাবে না ততদিন এটা থেকে মুক্তিও মিলবে না।
এদিকে বৃষ্টিতে নগরবাসীর অনেকে দুর্ভোগে পড়লেও কেউ কেউ এই বৃষ্টিকে উপভোগও করেছেন। গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠা মানুষের মধ্যে বৃষ্টি নিয়ে আসে কিছুটা স্বস্তি। বর্ষার প্রথম বৃষ্টি খুব বেশি সময় স্থায়ী না হলেও মেঘলা আকাশ জানান দিয়েছে এবারের বর্ষা হয়তো নিরাশ করবে না এ সুন্দর প্রকৃতিকে।