আশার আলো করোনা প্রতিষেধকের দ্রুত উদ্ভাবন

36

কোভিড-১৯ এ প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে ৮মাস প্রায়। দেড় কোটি মানুষ প্রায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখের অধিক মানুষের। বাংলাদেশও এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের প্রিয় এ দেশটিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং অনেকটা পর্যুদস্ত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশ্ব এ রোগের কোন নির্ভরশীল প্রতিষেধক ও ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে পারেন নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বসে নেই। মেডিসিনসহ এ রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে তারা তৎপর। আশার কথা হলো, আক্রান্তিকরোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বা টিকা মানব শরীরের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর এবং তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফল প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে নামকরা সাময়িকী ল্যানসেটে। এছাড়া চীন ও আমেরিকাও ভ্যাক্সিন তৈরিতে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে। চীনে ২য় পর্যায়ের ট্রায়েল শেষে বাংলাদেশে সর্বশেষ ট্রায়েল করার কথা রয়েছে। এটি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক খবর। করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম।
আমরা জানি, এ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাÐ। বেকার হয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষ। বেড়েছে মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ। এ প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মানুষ অধীর অপেক্ষায় আছে করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর প্রতিষেধকের। সেক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল অবশ্যই আমাদের আশাবাদী করে।
বস্তুত করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে বিশ্বের দেশে দেশে বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এ ব্যাপারে সাফল্যেরও দাবি করেছেন। মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক করোনার প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের পক্ষ থেকেও যার যার টিকা নিরাপদ বলে জানানো হয়েছে।
ব্রিটেন, চীন ও আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াও তাদের উদ্ভাবিত টিকাকে কার্যকর বলে দাবি করেছে এবং তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জার্মানও সুখবর দিয়েছে। আমাদের দেশে দু-একটি প্রতিষ্ঠানও টিকা নিয়ে কাজ করছে। তবে করোনার টিকা উদ্ভাবনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যত এগিয়ে আছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, যদিও এটিকে পুরোপুরি নিরাপদ ঘোষণা করার জন্য আরও পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। বলা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকর করে তুলতে সহায়তা করবে।
এ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা সফল হলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রæপ আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা করোনার টিকা ছেড়ে দিতে পারবে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে এটি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে। প্রকৃতপক্ষে আমরা সেই দিনটিরই অপেক্ষায় আছি।
জনমনে প্রশ্ন রয়েছে, টিকা উদ্ভাবন হলেই কি করোনা মহামারীর অবসান হবে? বস্তুত টিকা উদ্ভাবনে সফল হলেও রোগটি পুরোপুরি দূর হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? করোনাভাইরাসের মিউটেশনের কারণে বারবার নতুন টিকার প্রয়োজন হবে? তবে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় সেটিও সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী। সবচেয়ে যা জরুরি তা হল, করোনার টিকা বাজারে আসার পর তা যেন বিশ্বের সব মানুষের জন্য সহজলভ্য হয় এবং তা দ্রুত সবার কাছে পৌঁছায়।