‘আল কায়েদা-তেহরান’ যোগসূত্র?

39

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে তার নেপথ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে তেহরানের গভীর যোগসূত্রতার সম্পর্ক আছে বলে দাবি ওয়াশিংটনের। গত এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দেশটির সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে এমনটাই বলেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির শুনানিতে বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা ইরান ভূখন্ড থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং তেহরান সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে।
পম্পেও আরও বলেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান এবং আল কায়েদার মধ্যে যে যোগসূত্রতা আছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ইরানের সঙ্গে আল কায়েদার সম্পর্ক নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তা একদম সত্য।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন, ‘তারা (ইরান) তাদের দেশকে আল কায়েদার ট্রানজিট হিসেবে ব্যববহার করার ছাড়পত্র দিয়েছে। তারা আল কায়েদাকে লালন-পালন করছে। আর এভাবেই জঙ্গিগোষ্ঠীটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।’ এখনো কিছু বিশ্লেষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা আছেন যারা সবসময় যুদ্ধের পক্ষে। ট্রাম্প প্রশাসনের এসব উপদেষ্টারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই আল কায়েদার সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে যুদ্ধের পক্ষে মত দিচ্ছেন।
২০০১ সালের ৯/১১ টুইন টাওয়ারে সেই ভয়াবহ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে অথোরাইজেশন ফর ইউজ অব মিলিটারি ফোর্স বা এইউএমএফ নামে একটি আইন পাস হয়। সেই আইন অনুযায়ী ইরানের বিরুদ্ধে যে আল কায়েদা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাতে করে হোয়াইট হাউস মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়েই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।
তবে আল কায়েদার সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতার যে ‘অতিরঞ্জিত’ অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা অনেকটা ‘অপ্রমাণিত’ এবং সত্যিকার অর্থে একটা বড় রকমের ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করছেন অনেকেই। তবে এটা সত্য না মিথ্যা তা অবশ্য নির্ভর করছে কাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে সেটার ওপর।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অভিযান চালিয়ে আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। সেসময় মার্কিন সামরিক বাহিনী আল কায়েদা যেসব নথি হাতে পায় তার ভিত্তিতে তারা দাবি করে যে জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরানে তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। মার্কিন সাময়িকী দ্য আটলান্টিক ২০১৭ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে, আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের ছেলেদের একজন এবং সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হামজা বিন লাদেনে ইরানে আশ্রয় নিয়ে আছেন এবং সেখানেই বিয়ে করেছেন তিনি।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে আসা নথি অনুযায়ী, আল কায়েদার আরেক নেতা মাহফুজ ইবনে আল ওয়ালিদকে ১৯৯৮ সালে পূর্ব আফ্রিকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওয়ালিদ নামের ওই আল কায়েদা নেতা ৯/১১ এ টুইন টাওয়ারে হামলার কিছুক্ষণ পর পাকিস্তান থেকে বাসে করে ইরানে যান। মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে আসা সেসব নথি বিশ্লেষন করে দ্য আটলান্টিক জানিয়েছে, আল কায়েদা নেতা ওয়ালিদ যখন ইরানে পৌঁছান তখন কুর্দি ফোর্স নামে পরিচিত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) তাকে আশ্রয় দেয়। ওয়ালিদ আইআরজিসি বর্তমান প্রধান জেনারেল কাশেম সোলেইমানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
যাইহোক এরপর ইরান বুঝতে পারে যে ইরানের মাটিতে আল কায়েদার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে উত্তেজনার মুখে ফেলতে পারে। তারপর ২০০১ সালে ডিসেম্বরে ইরানের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঘোষণা দেন যে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নিদর্শন হিসেবে তারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির সদস্যদেরকে তাদের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইরানের এমন প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানায়। ঠিক তার একমাস পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশ বলেন, ইরান হলো ‘শত্রুপক্ষের’ একটা অংশ। যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি আটকে থাকে।
অসমর্থিত সেই মার্কিন নথির বরাত দিয়ে দ্য আটলান্টিক আরও জানায়, লাদেনের ছেলে হামজা এবং আল কায়েদার আরও বেশ কিছু নেতা ইরানের কুর্দি বাহিনীর (আইআরজিসি) কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়। তারপর সেখান থেকে ইরাকে গিয়ে তারা দেশটিতে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালায়।