আল্লাহর নিদর্শন

390

ইরশাদ হয়েছে, তখাল্লাকু বেআখলাকিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর গুণবলী নিজের মাঝে রপ্ত কর। আরো ইরশাদ হয়েছে-সিবগাতাল্লাহ ওয়ামান আহসানা সিবগাতন। অর্থাৎ নিেেজর আল্লাহর রঙে রাঙাও তা হতে উত্তম রঙ কি আর আছে? আল্লাহর নবী রসুলগণ ফরজ এবাদতের পরেও মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে একাকী নির্জনে আল্লাহকে রাজী করিয়ে আল্লাহর রঙে নিজেদের রঙিন করে সৃষ্টি জগতের জন্য নিজেদের করেছেন অনুকরণীয় ও চিরস্মরণীয়। ইরশাদ হয়েছে-‘ যারা আল্লাহর রসুলের অনুসরণ করল তারা আল্লাহর রহমত অর্জন করল। আমাদের নবী করিম (স:) কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন না করে হেরা পর্বতের গুহায় একাকী নির্জনে ধ্যান করে আল্লাহ হতে মহান বাণী প্রাপ্ত হলেন, ‘ইকরা বি ইসমে রাব্বিকাল্লাজি খালাক’ অর্থাৎ পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। এভাবে যারা ফরজ এবাদতের পরে নফল এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর অতি নিকটে পৌঁছে যান তাদের সম্পর্কে হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, বান্দা যখন নফল এবাদতের মাধ্যমে আমার এমন নৈকট্যে পৌঁছে আমি তার হয়ে যাই। সে যা ধরে আমার হাত দিয়ে ধরে, যা বলে আমার মুুখ দিয়ে বলে বলে, যা শুনে আমার কান দিয়ে শুনে। ইরশাদ হয়েছে, হাজা মিন ফাদলে রাব্বি ইউতিউমাইয়্যাশা অর্থাৎ আমি যাকে ইচ্ছে যত তত দান করি। এমনভাবে রেয়াজত করে আল্লাহকে রাজি করিয়ে হযরত শেখ ফরিদ (র:) সুরা ইখলাছ পরে ফুৎকার দিয়ে সাধারণ ডিমকে স্বর্ণের ডিমে পরিণত করেছেন। এমনভাবে গুহায়, অরণ্যে কঠিন রেয়াজত করে গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী সৈয়দ গোলমুর রহমান ফুঁ দিয়ে তামার খন্ডকে সোনার খÐে পরিণত করেছেন। আল্লাহ চান তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ যেন তাকওয়া (খোদাভীরুতা) অর্জনে সমর্থ হয়। ইরশাদ হয়েছে-ওয়ামাযুআজজিম মিন শায়েরিল্লাহ ফানহামিন তাকওয়াল কুলুব। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান কর। যাতে তার মাধ্যমে তোমাদের অন্তরে তাকওয়া (খোদাভীরুতা) আসে। তাকওয়া অর্জন ছাড়া আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তি সম্ভব নয়। এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর নির্দশন সমূহকে সম্মানের মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া অর্জন করতে সমর্থ হয়। তাই আল্লাহর নিদর্শন কি তা বুঝা আবশ্যক। ফরজ এবাদত হিসেবে আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে তারা হজ্ব করতে যাই। হজ্বের একটা আবশ্যক কর্ম হলো সাঈ করা। অর্থাৎ সাফা মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌঁড়ানো। এর কারণ হল আল্লাহর একজন মহান নবী হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর (র:) স্ত্রী বিবি হাজেরা তার শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল জবিউল্লাহ যখন পিপাসার্ত অবস্থায় মৃতপ্রায তখন সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে পানির অনুসন্ধানে পাগলপ্রায়। এ মহীয়সী অলী আল্লাহ তার পুত্রকে বাঁচানোর প্রানান্ত চেষ্টার দৌঁড়ানো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দীয় হয়েছে যে উম্মতে মোহম্মদীর জন্য এবাদতের অনুসঙ্গ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে লক্ষনীয় যদিও কাজটি একান্তই ব্যক্তিগত নিজের বাচ্চাকে বাঁচানোর পারিবারিক চেষ্টার অনুসঙ্গ তথাপি এ পারিবারিক কাজটি একজন অলীর (বিবি হাজেরা) দ্বারা সম্পন্ন হওয়াতে এ কাজটি মুসলিম জাহানের জন্য অনুকরণীয় এবং যে স্থানে তিনি দৌঁড়েছেন সেই সে স্থানকে আল্লাহ আল্লাহর নির্দশন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেÑ ইন্নাস সাফা ওয়ালা মারওয়াতে মিন শায়েরিল্লাহ’। অর্থাৎ নিশ্চয়ই সাফা ও মারাওয়া পাহাড় আল্লাহর নিদর্শন। আর পূর্বেকার আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করলে তাকওয়া অর্জন সম্ভব হয়। অর্থাৎ নবী অলিগণের রেয়াজতের স্থানকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সম্মানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নবী অলিগণ দৃশ্যত মৃত্যুবরণ করলেও তারা মৃত নয় তারা জীবিত। সুরা বাকারাতে ইরশাদ হয়েছে- নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেছেন তারা মৃত নয় জীবিত। তোমরা তা অবগত নও। আরো ইরশাদ হয়েছে- যারা আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করেছেন এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা মৃত নয় বরং জীবিত এবং আমি আল্লাহ তাদের রিজিক দিয়ে থাকি। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি আল্লাহওয়ালা নবী অলীগণ দৃশ্যত মৃত্যুবরণ করলেও তাদের কবরে আরাম ফরমান আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে। তাহলে যদি আল্লাহর নবী অলির জাহেরা জিন্দেগীর রিয়াজতের স্থান হেরা গুহা সাফা মারওয়া ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হয়। তবে নিশ্চয়ই যেখানে আল্লাহর নবী অলীগণ রওজাতে শুয়ে আছেন তা আল্লাহর নিদর্শন। তাই আল্লাহর নির্দেশে আমরা হজ্জ্বে বায়তুল্লাহর সময় আমরা নবীর রওজা মসজিদে নববীতে তাকওয়া অর্জনের জন্য যাই। আমরা নবীর পরবর্তী নবীর পদাঙ্ক অনুসারী অলীগণের রওজাসমূহকে সম্মান করি, জিয়ারত করি, তাদের বেলাদত, বেছালকে উসিলা করে উরস ও খোশরোজ পালন করি। যাতে এ সমূহের মাধ্যমে আমাদের অন্তরে তাকওয়া অর্জন হয়। কারণ রাব্বুল আলামীন ঈসারুহল্লাহর মাধ্যমে বলেছেন-‘ যেদিন আমি দুনিয়াতে এসেছি সেদিনও রহমত, যেদিন দুনিয়া হতে বিদায় নিব সেদিনও রহমত। তাই আমরা মোমেন মুসলমান হওয়ার জন্য কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ যাকাতের সাথে আল্লাহ ওয়ালাগণের রেয়াজতের স্থান তাদের রওজা পাক জিয়ারত, মিলাদ, উরস খোশরোজ পালন করে তাদের সম্মান করার চেষ্টার মাধ্যমে তাকওয়া লাভ করতে পারি। তেমনি অলিয়ে কামেল গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী সৈয়দ গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবা ভান্ডারী (ক:) খোশরোজ শরীফ এমন একটি ক্ষণ যে ক্ষণে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্য লাভে সমর্থ হতে পারি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক