আলো-আঁধারির রিং রোড ও আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার

184

পতেঙ্গায় আউটার রিং রোড ও লালখান বাজার থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, এই দুই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আলোকায়নের অভাবে এ দুই প্রকল্প এলাকায় রাতের বেলায় তৈরি হচ্ছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। প্রকল্পের কিছু অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। উন্মুক্ত করে দেওয়া এলাকায় প্রতিদিন দর্শনার্থীর ঢল নামছে। নতুন দৃশ্যপট দেখার জন্য মানুষের ভিড় বাড়লেও এখনো পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার সমন্বয় ঘটানো হয়নি। সন্ধ্যা নামলেই সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাঝখানে কিছুদিন আলোর ব্যবস্থা করা হলেও এখন বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পিডিবি।
একই অবস্থা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারেরও। বাতি না জ্বালানো এবং লাইনের ত্রুটি থাকার কারণেই গত কয়েকমাস ধরেই আলো-আঁধারির খেলা চলছে ফ্লাইওভারটিতে। বাতি না জ্বলার কারণে ফ্লাইওভারটি রাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। তাছাড়া ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা তো নিত্যদিনের। সিডিএ’র মালিকানাধীন ফ্লাইওভারটি নিয়ে দিন দিন বাড়ছে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহুরুল আলম দোভাষ বলেন, পতেঙ্গায় আউটার রিং রোডের কাজ চলমান। এখনো সেখানে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ আমরা দিইনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিছু সোলার লাইট স্থাপন করেছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি চিন্তা করবো। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকবে। হস্তান্তর করার পর আমরা বিদ্যুৎতের খরচের সংকুলান নিয়ে চিন্তা করবো।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারে লাইট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের লাইটগুলো জ্বলে প্রিপ্রেইড মিটার থেকে। অনেক সময় মিটারের কার্ডের টাকা শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া আমরাও বিদ্যুৎ ব্যবহার কিছুটা সংকোচিত করতে চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের জন্য আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে সেখানে আলোকায়নের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এতে কয়েকমাস সৈকত এলাকা রাতে আলোকিত থাকে। এজন্য পিডিবি বিল দাবি করে সিডিএ’র কাছে। কিন্তু সিডিএ চলমান প্রকল্প এলাকার কোনো কাজের জন্য বিল দিতে রাজি হয়নি। এতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পিডিবি। যার কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সৈকত এলাকা। যদিও কিছু সোলার লাইট থাকায় সামান্য আলো পাওয়া যাচ্ছে। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে দীর্ঘ এ সময় পর্যন্ত আলো-আঁধারির মধ্যেই দর্শনার্থীদের চলতে হবে। এতে দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
আউটার রিং রোড প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, পিডিবি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। তারাই পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পুরো শেষ হলে স্থায়ীভাবে আলোকায়ন করবে সিডিএ। আপাতত সোলার লাইট আছে।
এদিকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারে রাতে উঠলেই যে কারো গা ছমছম করবে। মনে ভর করবে অজানা আতঙ্ক। হঠাৎ ছিনতাইকারীর হামলা বা দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের এ চিত্র গত কয়েক মাস ধরেই। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে ফ্লাইওভারের বাতি জ্বালানো হচ্ছে না। অবশ্য সিডিএ দাবি করেছে, ল্যাম্পপোস্টের খুঁটির গোড়া থেকে বিদ্যুৎতের তার কেটে নিয়ে গেছে চোরের দল। ফলে অর্ধেক বাতি জ্বালানো যাচ্ছে না। এতে রাতের বেলায় অন্ধকার থাকছে ফ্লাইওভারটি।
সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, লাইট জ্বলে না সেটা ঠিক না। অর্ধেক লাইট জ্বলে। লাইনে একটি সমস্যার কারণে বাকি লাইটগুলো বন্ধ আছে। আমরা কাজ করছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আশা করি পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাবল চুরি হয়েছিল। যেভাবে ক্যাবল চুরি হচ্ছে তাতে লাইন সচল রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি, হাতেনাতে ধরে পুলিশেও দিয়েছি। তাতেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশ থেকে লাইন খুলে নিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর একনেকের সভায় অনুমোদন পায়। ফ্লাইওভারের মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফ্লাইওভারটির মূল অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় ধরা হয় ৪৫০ কোটি টাকা এবং র‌্যাম্প ও লুপ তৈরির কাজে ২৪৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের জুনে ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হয়। ফ্লাইওভারটি নগরীর মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়ে লালখান বাজারে এসে নেমেছে।
অন্যদিকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৈকতের একাংশ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রকল্পে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে।