আলহাজ্ব এয়াকুব আলী চৌধুরী

128

প্রসিদ্ধ সাধক হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রা.) এর পূণ্যভূমি, ঐতিহাসিক দেয়াঙ পাহাড়ের পাদদেশে এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার অর্ন্তগত শস্য শ্যামলা বটতলী গ্রামে এক শুভ লগ্নে জন্ম গ্রহণ করেন আলহাজ্ব এয়াকুব আলী চৌধুরী। যিনি এয়াকুব মিয়া হিসেবে সমাধিক পরিচিত ছিলেন। এ কৃতি পুরুষের পিতা মরহুম আছদ আলী চৌধুরী দোভাষী একজন স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বার্মার সাথে ব্যবসা করতেন। জনাব আছদ আলী চৌধুরী দোভাষী ২২ জুলাই ১৯০৭ ইংরেজী হতে আমরণ বটতলী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্বে ছিলেন এবং চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের তৎকালীন জুরী বোর্ডের জুরার (বিচারক) ছিলেন। বংশ পরম্পরায় আছদ আলী চৌধুরীর মৃত্যুতে তার জ্যৈষ্ঠপুত্র আবদুল আজিজ চৌধুরী ১৯২৪ ইংরেজী সনে বটতলী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে ও জুরী বোর্ডের সদস্য পদে আসীন হন। শিক্ষায় এলাকাকে আলোকিত করার লক্ষ্যে নিজ অর্থায়নে ও জমিতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৯১৬ ইংরেজী সালে বটতলী শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রা.) এম, ই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ১৯২৭ ইংরেজীতে বটতলী পোষ্ট অফিস স্থাপন করেন। ১৯৩৫ ইংরেজী সালের ১১ নভেম্বর তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মহিলা ওর্য়াড নির্মাণ করার নিমিত্তে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করেন। জনাব আবদুল আজিজ চৌধুরী বিভিন্ন অবদান রাখায় ১৯৩৭ ইংরেজী সালে তৎকালীন ইজওঞওঝঐ সরকার কর্তৃক স্বর্ণপদকে ভূষিত হন এবং এড়া.ড়ভ ইধহমধষ সরকার কর্তৃক একাধিক সনদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন সরকার আবদুল আজিজ চৌধুরী ডি,সি সড়ক (বটতলী-বৈরাগ) হিসেবে নামকরণ করেছে। তিনি ২১ জানুয়ারী ১৯৪৫ ইংরেজীতে পরলোক গমন করলে পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আবদুল আজিজ চৌধুরীর অনুজ মেধাবী, বিচক্ষণ ও তীক্ষè বুদ্ধি সম্পন্ন আলহাজ্ব এয়াকুব আলী চৌধুরী ১৯৪৫ ইংরেজীতে বটতলী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে ১৯৭০ ইংরেজী সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তীতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬ বৎসর কাল বটতলী ইউ, পি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং একজন ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন। জনপ্রিয় এ নেতা ১৯৫৪ ইংরেজী সালে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা নুরুল আনোয়ার চৌধুরী কে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬০ ইংরেজী সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে আনোয়ারা উপজেলায় অনেক লোকের প্রাণহানি ও ব্যাপক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। তখন অত্র এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিগেঃ খালেদ মোশারফকে তার বাসভবনে কন্ট্রোল রুম খোলার ব্যবস্থা করে দেন এবং তিনি খালেদ মোশারফ কে সাথে নিয়ে ত্রাণ কার্যে পরিচালনা করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সমগ্র আনোয়ারায় বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা হয়। ১৯৭৭ ইংরেজী সালের মার্চ মাসে বটতলী ইউ,পি ভবনে আনোয়ারা বিদ্যুতায়ন অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়। এলাকার নিরক্ষরতা দূরীকরাণার্থে তিনি এলাকায় একটি নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। রুস্তম হাট উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি ও তার অগ্রজ আবদুল আজিজ চৌধুরী নিজস্ব জমি দান করেন। হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রা.) মাজার শরীফের প্রধান তোরনের জন্য তিনি পরিবারিক জমি দান করেন।
অনগ্রসর এলাকার লোকজনকে অধিক শিক্ষিত করার মহৎ উদ্দ্যেশে এয়াকুব আলী চৌধুরী তার অগ্রজ আবদুল আজিজ চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বটতলী শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রা.) এম,ই বিদ্যালয়কে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে নি¤œ মাধ্যমিক ও ১৯৫৪ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অনন্য অবদান রাখেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত ও বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন।
এয়াকুব আলী চৌধুরী ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা আদর্শবান পুরুষ। একটি আলোকিত সমাজ গঠনই ছিল তার মূল লক্ষ্য। কখনো তিনি তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। নির্লোভী জনাব চৌধুরী গরীব, দুঃখী ও অবহেলিত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। বর্ণাঢ়্য জীবনের অধিকারী এই ব্যক্তি সর্বদা অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তার মাঝে কখনো অহংকার, গৌরব, অহমিকা, দম্ভ ছিলনা। তিনি কোনদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। তার শাসনামলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হননি।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় এয়াকুব আলী চৌধুরী ২০০১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ১১০ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। মরহুম স্বীয় কর্মগুণে আমাদের মাঝে আজও জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন। তার অবদান চির অ¤øান এ পৃথিবীর লোকালয়ে। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে বেহেশত নছিব করেন ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকীতে এই কামনা করি।
লেখক : চেয়ারম্যান, এয়াকুব-ছালেহ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম ও কলামিস্ট