আলকরণে সিন্ডিকেটের অবৈধ টেম্পু স্ট্যান্ড

126

কোতোয়ালী থানার আলকরণ মোড়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে অবৈধ টেম্পু স্ট্যান্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সবসময় ৫০ থেকে ৮০টি টেম্পু দাঁড়িয়ে থাকে। এতে কোতোয়ালী থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে।
জানা গেছে, এ অবৈধ টেম্পু স্ট্যান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, আমরা অবৈধ গাড়ি পেলেই ড্যাম্পিং করে ফেলছি। সিটি কর্পোরেশন বলছে, এখানে কোনো গাড়ির স্ট্যান্ডের অনুমতি দেওয়া হয়নি। চারকরা নিজেরাই এখানে টেম্পু স্ট্যান্ড করেছে।
নিউ মার্কেট মোড় হতে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সাধারণ যাত্রীদের একমাত্র বাহন পুরনো মডেলের এ টেম্পুগুলো। তবে এখন নতুন সংযোজন হয়েছে মাহিন্দ্রা এবং পিয়াজিও কোম্পানির লেগুনা গাড়ি। এসব গাড়িতে আলকরণ মোড় থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয় জনপ্রতি ১০ টাকা করে।
গত শনিবার সরেজমিন যায়, পেছন দিক থেকে একের পর এক গাড়ি নতুন ব্রিজের উদ্দেশে ছাড়ছে। যাত্রী পরিপূর্ণ হলেই ছাড়ছে গাড়ি। মনে হবে যেন এটি একটি স্টেশন। লাইনে দাঁড়াতে গাড়ি প্রতি লাইনম্যানকে দৈনিক দিতে হয় ৫০ টাকা করে। এভাবে ১০০ গাড়ি থেকে দৈনিক আদায় করা হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। রাস্তার পাশে এসব গাড়ি পার্কিং করার ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার আরেকটি সিন্ডিকেট ফুটপাত দখল করে রাস্তার উপর ফলের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক টেম্পুচালক পূর্বদেশকে বলেন, আমরা শ্রমিক ফেডারেশনকে ওয়াবিল (ট্যাক্স) দিয়ে লাইনে গাড়ি ঢুকিয়েছি। প্রতিদিন তাদেরকে গাড়িপ্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় লাইনে গাড়ি ঢুকাতে একটা বড় অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু কত টাকা সেটি বলেননি।
শাহাদাত হোসেন নামে এক পথচারীর অভিযোগ, টেম্পু স্ট্যান্ড এবং হকারদের কারণে ফুটপাত দিয়ে আমাদের হাঁটতে কষ্ট হয়। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ক’দিন আগে আমার এক বন্ধু রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কা খায়।
আরেক পথচারী ফাতেমা বলেন, ট্রাফিক পুলিশরা কি চোখে দেখে না এসব? তাদেরকে তো মনে হয় টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। আমরা যদি কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ি তাহলে দায়ভার তো কেউ নিবে না।
চট্টগ্রাম অটো টেম্পু সমিতি-১০ এর সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পূর্বদেশকে বলেন, এখান থেকে টেম্পু যাত্রী নিয়ে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যায়। সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছে। আর সবসময় তেমন যানজট হয় না। মাঝেমধ্যে যানজট হলে আমাদের লোকজন তা নিরসন করে।
কোতোয়ালী জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক সৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেন, যেসব গাড়ির কাগজপত্র নেই আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু গাড়ির স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ সেটি দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ’র। বিআরটিএ টেম্পু চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেয়ার কারণে তারা স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে।
জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ দেয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে নগরীর ট্রাফিক উত্তর জোনের পরিদর্শক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন খান বলেন, আমাদের জোনে ১০৯ জন সার্জেন্ট প্রয়োজন কিন্তু রয়েছে মাত্র ৬১ জন। তাই নিউ মার্কেট আর কোতোয়ালী মোড়টাতে গাড়ির চাপ বেশি থাকে বিধায় আলকরণের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ দেয়া হয় না। আর যখন গাড়ির চাপ কম থাকে তখন সড়কের পাশে দাঁড়ানো গাড়িগুলো ধরে নিয়ে আসি। গত ২০ দিনে আলকরণের সামনে থেকে ৭৭টি গাড়ি জব্দ করেছি।
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, আমরা সুস্থ থাকার জন্য ফুটপাতে হাঁটতে চাই। কিন্তু ফলওয়ালা আর টেম্পুওয়ালার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আমি আমার ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করতে চাই এবং বিউটিফিকেশনের উদ্যোগ নেয়া হবে। টেম্পু স্ট্যান্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অনুমতি দেয়নি। তারা অবৈধভাবে স্ট্যান্ড করেছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাবো।
বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর পূর্বদেশকে বলেন, কাগজে কলমে কোনো টেম্পু স্ট্যান্ড কোতোয়ালী এলাকায় নেই। গাড়ির রুট হিসেবে একটা দুইটা গাড়ি যাত্রী তুললে সেটি দোষের কিছু নয়, কিন্তু ২০ থেকে ৫০টি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে অন্যান্য পরিবহনসহ জনসাধারণের ভোগান্তিতো হবেই। আমরা যখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করি, তখন এসব জায়গায় গাড়ি থাকে না। আর যাদের পাই তাদেরকে কারাদÐ কিংবা জরিমানা করি।