আর কোনো দেশে মশা মারতে রুল দিতে হয় না

32

ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মত রোগের বিস্তার রোধে মশা নির্মূলে দুই সিটি কর্পোরেশনের নেওয়া পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ করে একজন বিচারক বলেছেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশে মশা মারতে আদালতকে রুল দিতে হয় না।
আদালত বলেছে, মশা নির্মূল কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় হাই কোর্টে হাজির থাকতে হবে। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেয়।
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ, মশা নির্মূলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে- সে বিষয়ে দু’টি প্রতিবেদন এদিন হাই কোর্টে উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েরা ফাইরুজ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু’টি বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। কোর্ট আমাদের প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের চিফ হেলথ অফিসারকে (প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) বৃহস্পতিবার তলব করা হয়েছে’।
কেন তাদের তলব করা হয়েছে জানতে চাইলে সায়েরা ফাইরুজ বলেন, ‘যে দুটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেখানে কি কি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই বলে মনে করেছে আদালত। যদিও আমরা দেখিয়েছি যে, সিটি কর্পোরেশন চেষ্টা করছে মশা নিধন করতে। জনসচেতনতামূলক কর্যক্রম চালানো হয়েছে। কিন্তু মহামান্য আদালত বলেছে, আরও স্টেপ নেওয়া দরকার ছিল। এ সম্পর্কে জানতেই, বিশেষ করে এডিস মশা নির্মূলে সিটি কর্পোরেশন কি করছে তা জানতেই দুই কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে বলে মনে করছি’। খবর বিডিনিউজের
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিবেদন উপস্থাপন করার এক পর্যায়ে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর প্রসঙ্গ এলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘কই আমরা তো দেখছি না। হঠাৎ করে মশার ওষুধ কোথায় পেলেন? ওষুধে কি কোনো কাজ হয়?’
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপও সিটি কর্পোরেশন নিয়েছে।
বিচারক তখন বলেন, ‘জনসচেতনতা দিয়ে কি হবে? আপনারা সচেতন কিনা? এরপর জনগণের সচেতনতার কথা বলবেন। আর আপনারা যদি না পারেন, তাহলে একটা আবেদন নিয়ে আসেন, সচেতন হওয়ার জন্য জনগণের উপর রুল জারি করে দিই। আপনাদের তো কাজ নাই। আগে তো কিছুই করেননি। আর এটাতো বিশ্বাসযোগ্য হবে না যদি মানুষের হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ না হয়। আমরা চাই হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ হোক’।
বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক এ সময় বলেন, ‘মশা মারতে পৃথিবীর আর কোনো দেশের হাই কোর্ট রুল দেয়, এমন নজির নাই’। এরপর আদালত দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলবের আদেশ দেয়।
গত মাসের প্রথম দিকে ঢাকায় ডেঙ্গু প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এরইমধ্যে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গুতে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যদিও সরকারের তরফ থেকে মাত্র পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু এসেছে ‘ব্যতিক্রমী’ চেহারা নিয়ে- রোগের লক্ষ্যণ বদলে যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরে এবার মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, যকৃত ও কিডনির মতো নানা অঙ্গও আক্রান্ত হতে দেখছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি এডউইন স্যালভাদর। ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত ১৪ জুলাই হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয়। ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহি অন্যান্য রোগের বিস্তার রোধে এডিসসহ মশা নির্মূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয় আদেশে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের মশাবাহিত অন্যান্য রোগের বিস্তার রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
এছাড়া মশাবাহী এজাতীয় রোগ প্রতিরোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থার নেওয়া হবে না, তাও জানতে চায় আদালত। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র, দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসচিব, এলজিআরডি সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনই আদালত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগের বিস্তার রোধে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা রবিবারের মধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ বিবাদীদের জানাতে বলেছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় দুই সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের মাধ্যমে গতকাল সোমবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।