আর্মেনিয়ার একটি এলাকার নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার নেপথ্যে

124

এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের দেশ আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভান। পাহাড়-পর্বতে ঘেরা ইয়েরেভানের আয়তন ৮৮ বর্গমাইল। সেখানকার একটি সাজানো সুন্দর এলাকার নাম ‘বাংলাদেশ’। তবে বিলবোর্ডে ইংরেজি বানানের ‘বাংলাদেশ’ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবকিছু আর্মেনিয়ান ভাষায় লেখা। এলাকাটির অফিসিয়াল নাম ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’। স্থানীয়দের কাছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবেই পরিচিত জায়গাটি। পরিবহন, দোকানপাট, আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সবাই এই নামেই চেনেন। সেখানে কেউ বাংলাদেশের কথা বললে স্থানীয়রা আর্মেনিয়ার ‘বাংলাদেশ’ এলাকার কথাই ধরে নেন। ইয়েরেভানের ১২টি বিভাগের মধ্যে ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’ অন্যতম। সেখানকার জনসংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৯০০। বাংলাদেশ নামক জায়গাটির ল্যান্ডমার্কগুলো হলো প্যাট্রিয়টিক ওয়ার মেমোরিয়াল পার্ক, ইয়ুথ পার্ক, মালাতিয়া গার্ডেন, ম্যাটারনিটি পার্ক, লাভ অ্যান্ড ফেইথ পার্ক, ইতালিয়ান পার্ক, দালমা গার্ডেন মলসহ বেশকিছু গির্জা। প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন এই নামকরণ ? এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আরমানিটোলার ভূমিকা রয়েছে এতে। অষ্টাদশ শতকে পুরান ঢাকার ওই এলাকায় আর্মেনিয়ার অধিবাসীরা থাকতেন। ভাগ্যবদলের লক্ষ্যে ঢাকায় আসা আর্মেনিয়ানরা অল্প সময়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রæত বিস্তারের মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। তখন ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণের রমরমা ব্যবসা ছিল। এই পণ্য উৎপাদন ও বিতরণের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারদের অধিকাংশ ছিল আরমেনিয়ান। তারা যেখানে থাকতেন, সেই জায়গাটির নামকরণ হয়ে যায় আরমানিটোলা। এখানে আর্মেনিয়ানদের স্থাপিত একটি গির্জা আছে। ইয়েরেভানের বাংলাদেশে একটি খাবারের দোকান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানের জায়গাটির নাম রাখা হয় ‘বাংলাদেশ’। এর পেছনে রয়েছে অন্যরকম প্রতিবাদ। আর্মেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তান কার্পণ্য করে। এর প্রতিবাদে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকে এমন নামকরণ হতে পারে বলে মনে করা হয়। অনেকের অভিমত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে ইয়েরেভানের জায়গার নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা পায় আর্মেনিয়া। চাইলে ভিসা নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ইয়েরেভানের বাংলাদেশ।