আরো শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া জরুরি

47

নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সম্পন্ন হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তিশালী স্তর উপজেলা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন। গতকাল রোববার ৭৮টি উপজেলায় ভোট গ্রহণের মাধ্যমে তৃণমূলে আবারও ভোটের আমেজ শুরু হয়েছে বলে আমাদের ধারণা, যদিও এ আমেজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত তেমন উৎসবমুখর, উপভোগ্য নয় বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। কারণ এ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টিসহ তাদের কয়েকটি মিত্র দল অংশগ্রহণ করছে মাত্র। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় একদিকে যেমন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিমূলকও হচ্ছে না। এরপরও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় সরকারের এ উপজেলা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। এ নির্বাচনে যে দল বা জোট অংশগ্রহণ করেছে তারা নিশ্চিতভাবে ইতিহাসের অংশ হবে। আর যারা অংশগ্রহণ করেনি তাদের মতামত এবং অংশগ্রহণ না করার বিষয়গুলো সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। জনসম্পৃক্ত কোন দল নীরবে নির্বাচন অংশগ্রহণ না করা দলের জন্য ও দেশের গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। আমাদের চট্টগ্রামের একটি কথা আছে ‘অপরের আইল কাটতে হবে বলে নিজের জমিতে চাষ নয়’। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা এখন তাই মনে হচ্ছে। জমিতে চাষ বন্ধ হলে একসময় এ জমি অনাবাদি হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
অতীতে অনেক ইতিহাসগড়া রাজনৈতিক দলের পরিণতি আমরা দেখেছি। কিন্তু দেশের মানুষ বিএনপি বা তাদের বিশ দলীয় জোটের পরিণতি এমনটি আশা করে না বলে আমাদের বিশ্বাস। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে আমরা জেনেছি, বিএনপি বা বিশ দলীয় জোটের অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। দল থেকে তাদের অনেককে বহিষ্কারের কথাও বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং তাদের জিতিয়ে আনার কৌশলগত উদ্যোগই জরুরি। এতে জনসমর্থনের বিষয়টিও প্রকাশের অবকাশ থেকে যাবে। গতকাল যে প্রথম ধাপের নির্বাচন হল বড় ধরনের কোন সংঘাত ছাড়া তা সম্পন্ন হয়েছে বলে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো তা নিশ্চিত করেছে। ফলে অনেকটা আত্মতুষ্টির ঢেকুর তুলে নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপের এ নির্বাচনকে ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণ’ বলেছেন। নির্বাচন কমিশন এও বলেছেন বড় ধরনের সংঘাত না হলেও নানা অনিয়মের কারণে ২৮টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করা হয়েছে; গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, দলীয় প্রতীকে এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের বর্জনের কারণে ভোটের লড়াইয়ের আমেজ দেখা যায়নি। অনেক ভোটকেন্দ্র দুপুরেও ছিল অনেকটাই ভোটারশূন্য। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী না থাকায় ইতোমধ্যে ২৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশন পাঁচ ধাপে এ উপজেলা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে। মার্চেই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ভোট হবে। বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হবে রোজার পর আগামী জুন মাসে। এরমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ১২৯ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ১৮ মাচ, তৃতীয় ধাপে ১২৭ উপজেলায় ভোট ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ১২২ উপজেলায় ভোট ৩১ মার্চ, শেষ ধাপে ভোট ১৮ জুন।
প্রথম ধাপের ৭৮ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন রয়েছেন। নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নামানো হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। জানা যায়, ভোটের পরেও দুই দিন মাঠে থাকবে তারা।